বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিচিত্র কল্পনার ছবিতে এবং সুরে আপনাকে প্রকাশ করিতে থাকে। এ সম্পূর্ণরূপে বাস্তব নহে, এ অনেক পরিমাণে স্বপ্নই। কিন্তু এই ‘মধুর আলস, মধুর আবেশ, মধুর মুখের হাসিটি, মধুর স্বপনে প্রাণের মাঝারে বাজিছে মধুর বাঁশিটি’র রাজ্য বড় মোহময়।

 যাঁহারা সৌন্দর্যের এই মোহকে ভোগলালসা নাম দিতে চান এবং সেইজন্য এই-সকল শ্রেণীর কবিতাকে অপবাদ দিয়া থাকেন, আমি তাঁহাদের সঙ্গে কোনমতেই মিলিতে পারিলাম না। মানুষের মনে অনেক সময়ে সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে ভোগের ইচ্ছা আসিয়া পড়ে, কিন্তু তাই বলিয়া তাহাদের মধ্যে অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ আছে এ কথা মানি না। ভোগের সমস্ত ক্ষণিকতা ও ব্যর্থতাকে অতিক্রম করিয়া সৌন্দর্যের একটি অসীমমুক্ত রূপ আছে— সেই রূপটিকে সত্যভাবে দেখিতে পাইলেই ভোগের লালসা আপনি ক্ষয় হইয়া যায়। এইজন্য মানবের দেহে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যে একটি প্রাণময় মনোময় অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্যের প্রকাশ আছে তাহার লোকাতীত রহস্যময় পরমবিস্ময়কর সুরটিকে যদি ধরিতে পারি তবে রক্তমাংসময় স্থূলবস্তুই একান্ত সত্যরূপে আমাদিগকে আকর্ষণ করে না— তখন তাহার অন্তরতম অনন্ত সত্যটিই আমাদের নিকট হইতে পূজা গ্রহণ করিবার জন্য আবির্ভূত হয়। মানবদেহের এই নিবিড় সৌন্দর্যের সুরটিকে কবি তাঁহার বীণা হইতে নির্বাসিত করিয়া দিতে পারেন না। এ সুর বিধাতার জগতে বাজিতেছে, এ সুর কবির বীণাতেও বাজিয়া উঠিবে। কেবল দেখিবার বিষয় এই যে, এই সুর বিশ্বসংগীতের অন্য-সকল তানকে অতিমাত্রায় আচ্ছন্ন করিয়া নিজেকেই একান্ত প্রবল করিরা না তোলে। আমাদের ভোগস্পৃহার নিগূঢ় উত্তেজনা-বশতই সেই অপরিমিত প্রবলতার আশঙ্কা আছে। সেইজন্যই প্রবৃত্তির পাল এবং নিবৃত্তির হাল, এই দুইয়ের

৩৮