বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ গাজিপুর হইতে ফিরিয়া আসিলেন। তখন তাহার সংকল্প হইয়াছিল যে একটা গোযানে করিয়া গ্র্যাণ্ডট্রাঙ্ক রোড ধরিয়া একেবারে পেশোয়ার পর্যন্ত পর্যটনে দীর্ঘকালের মতো বাহির হইয়া পড়িবেন— ‘শূন্যব্যোম অপরিমাণ মদ্য-সম করিতে পান’। এমন সময়ে তাঁহার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ তাঁহাকে জমিদারির কাজকর্ম দেখিবার জন্য অনুরোধ করিলেন। কাজের নামে প্রথমে কবি একটু ভীত হইয়া পড়িয়াছিলেন, কিন্তু শেষে সম্মত হইয়া জমিদারিতে গেলেন। তখন হইতেই শিলাইদহের জীবনের আরম্ভ।

 কেবল ভাব আপনার মধ্য হইতে আপনি খোরাক সংগ্রহ করিয়া যখন প্রাণধারণের চেষ্টা করে, তখন সে ক্রমেই বাস্তবসম্পর্কশূন্য একটা অলীক জিনিস হইয়া পড়ে। এই যে কাজ হাতে আসিল, বাংলাদেশের গ্রাম্য জীবনযাত্রার সুখদুঃখের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটিতে লাগিল, ইহাতে দেখিতে দেখিতে কবির রচনা ব্যক্তিত্বের বন্ধন ছাড়াইয়া বাস্তুব সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠা লাভ করিল। অনুভূতিগুলির প্রকাশ ব্যক্তিগত না হইয়া বিশ্বের হইয়া উঠিল।

 ‘সাধনা’র এই সময়েই জন্ম। ১২৯৮ সাল- তখন কবির ত্রিশ বৎসর বয়স; এই সময় হইতেই গল্পগুচ্ছেরও সূত্রপাত। ‘সাধনা’র পূর্বে তাঁহার ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’, ‘আলোচনা’ প্রভৃতি কিছু কিছু গদ্য রচনা বাহির হইয়াছিল— বালকেও ভ্রমণবৃত্তান্ত ও কিছু কিছু প্রবন্ধ তিনি লিখিয়াছিলেন। কিন্তু সে-সকল গদ্য ভাব কিম্বা ভাষার দিক হইতে তেমন বড় স্থান অধিকার করিতে পারে না। সাধনাতেই প্রথম পঞ্চভূতের ডায়ারি, গল্প, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রবন্ধ প্রভৃতি অনেক গদ্য

৪৩