সমকে একত্রে মিলাইয়া বিশ্ববোধে এবং আত্মবোধে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিতে পারি। বুঝিতে পারি মুহূর্তে মুহূর্তে বিশ্বের বিচিত্র রূপ, প্রলয়ের মূর্ছনার তানে তানে অসংখ্য আকারে বিকীর্ণ হইতেছে, আমাদের চেতনা সেই অসংখ্যের অন্তহীন সূত্রগুলি গণনা করিয়া শেষ পাইতেছে না এবং তৎসঙ্গেই মুহূর্তে মুহূর্তে সৃজনের পরিপূর্ণ সংগীত অখণ্ডতার মধ্যে সমস্ত বিলীন করিয়া দিয়া অন্তরের আনন্দকে সর্বত্র প্রত্যক্ষ জাজ্বল্যমান করিয়া তুলিতেছে।
বিশ্বজীবনে ভেদাভেদের লীলারূপ দর্শনশাস্ত্র দেখিতে পাইতেছেন, ব্যক্তিগত জীবনে কবি সেই একই জিনিস উপলব্ধি করিতেছেন। এ কি রকম? না,—সৌরজগতে যে আকর্ষণ-বিকর্ষণের শক্তি বিচিত্রভাবে কাজ করিতেছে, সেই শক্তির অণুপরমাণুর মধ্যেও ক্রিয়াশীল— বিশ্বের সর্বত্র এই একই নিয়মকে দেখিতে পাওয়া যেমন, ব্যক্তিগত জীবনের বিশ্বজীবনের লীলাকে প্রত্যক্ষ করা ঠিক তেমনি। বিশ্বে এমন কিছুই নাই যাহা আমরা এই জীবনের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়া অনুভব করিতে না পারি।
সুতরাং এই যে আমাদের ক্ষণিক জীবন এবং চিরন্তন জীবন উপনিষদে কথিত একই বৃক্ষে নিষণ্ণ দুই পক্ষীর মতো পাশাপাশি লাগিয়া আছে বলা গেল, ইহাকে হেঁয়ালি মনে করিবার কোনো তাৎপর্যই আমি খুঁজিয়া পাই না। অনন্তকে সকল সীমার মধ্যে, নিজের জীবনে এবং বিশ্বে, পূর্ণরূপে অনুভব করা আমাদের দেশে ঘরের কথা। আমরা অনায়াসেই বুঝিতে পারি যে, আমাদের মধ্যে যে-একজন সুখদুঃখ ভোগ করে মাত্র সে একজন, সুখদুঃখের ভিতর হইতে সারাংশ গ্রহণ করিয়া জীবনকে ক্রমাগত বড়র দিকে অনন্তের দিকে যে আর-একজন নিয়তই সৃষ্টি করিয়া তোলে তাহা হইতে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র। একজন
৫৩