কবিতাটিতে কেবল মানসমূর্তি নহে বাস্তবমূর্তিতেও সকল অনুভূতি এবং সকল সৌন্দর্যের সমঞ্জসীভূত এবং সারভূত জীবনদেবতাকে জড় চক্ষে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা যেন প্রকাশ পাইয়াছে। বৈষ্ণবেরা যে নিখিলরসামৃতমূর্তি বলেন, সকল সৌন্দর্যের মূর্তির ভিতরে যে অনন্ত প্রেমস্বরূপ ভগবান আপনাকে প্রত্যক্ষ চক্ষে দেখা দেন বলেন, জানি না সেইরকম ভাবে এই সমস্ত বাহিরের বিচিত্র সৌন্দর্যকে অখণ্ডভাবে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা ইহাতে ব্যক্ত হইয়াছে, না, বাস্তবিকই একটি বিশেষ নারীমূর্তির মধ্যে সমগ্রকে পাইবার ইচ্ছা প্রকাশিত হইয়াছে?
পরবর্তী কোনো কবিতায় যে কবি বলিয়াছেন:
ভাব পেতে চায় রূপের মাঝারে অঙ্গ,
রূপ পেতে চায় ভাবের মাঝারে ছাড়া।
অসীম সে চাহে সীমার নিবিড় সঙ্গ,
সীমা চায় হতে অসীমের মাঝে হারা।
তাহার ভাব এ নয় যে, অনন্তভাব আপনাকে একটিমাত্র রূপের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া দেখিতে চান— প্রত্যেক খণ্ডরূপের মধ্যেই তাঁহার ভাতি, তাঁহার পরিপূর্ণ প্রকাশ।
আর বাস্তবিকই “জীবনদেবতা” শীর্ষক সকল কবিতার মধ্যে আমাদেরই জীবনের মধ্যে যে আর-একটি জীবনের কথা বলা হইয়াছে তাঁহাকে কোনো বিশেষ একটি মূর্তিতে পাইবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায় নাই। কারণ জীবনদেবতার স্বরূপই হইতেছে বিশ্ববোধ। তিনি কি না জীবনের সমস্ত ভালোমন্দ সমস্ত ভাঙাগড়ার ভিতর দিয়া জীবনকে একটি অখণ্ড তাৎপর্যের মধ্যে উদ্ভিন্ন করিয়া তুলিতেছেন এবং তিনিই আবার কবির কাব্যে উপস্থিতকে চিরন্তনের সঙ্গে, ব্যক্তিগত জিনিসকে বিশ্বের সঙ্গে, খণ্ডকে সম্পূর্ণের সঙ্গে মিলিত করিয়া কাব্যকেও তাহার
৫৭