পদে পদে তুমি ভুলাইলে দিক,
কোথা যাব আজি নাহি পাই ঠিক,
ক্লান্তহৃদয় ভ্রান্ত পথিক
এসেছি নূতন দেশে।
জীবনকেও তো দেখা গিয়াছে এই জীবনদেবতাই ক্রমাগত ছোট দিক্ হইতে আরামের দিক্ হইতে পরম দুঃখের মধ্যে উপনীত করিতেছেন— সে যখনই কোনো একটি বিশেষ দিকে একটি প্রবৃত্তির মধ্যে বাঁধা পড়িতেছে তখনই বেদনার দ্বারা সেই সীমা বিদীর্ণ করিয়া তিনি তাহাকে আবার সমস্ত বিশ্বজগতের সঙ্গে যুক্ত করিতেছেন— কড়ি ও কোমল, মানসী প্রভৃতি সকল পূর্ব পূর্ব কাব্যেই তাহা আমরা দেখিয়া আসিয়াছি।
এই জীবনদেবতাকে আর-একটি হৃদয়ের গভীরতম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার আছে— আমাতে কি তুমি তৃপ্ত? অর্থাৎ যদিচ বলা হইল যে ইনি জীবনের বিচিত্র মালমসলা জড়ো করিয়া জীবনের ভিতর হইতে একটি পরিপূর্ণতাকে একটি বিশ্বব্যাপী সার্থকতাকে কাব্যের মধ্যে প্রকাশমান করিতেছেন তথাপি তাঁহার সঙ্গে আরো একটু নিবিড় যোগ আছে কি না। উপনিষদে কথিত দুই পাখির মতন যাহার জীবন লইয়া এই রচনাকার্য চলিতেছে তাহার অনুভূতির মধ্যে সার্থকতার কি কোনো আনন্দ বাজিতেছে না? তাই তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতে হয়— আমার মধ্যে কি তুমি তৃপ্ত? আমি যে নানা সুখদুঃখের আঘাতে ক্রমাগত আপনাকে গলাইয়া আমার শ্রেষ্ঠ জিনিসগুলি তোমাকে উৎসর্গ করিয়া দিয়াছি তাহা কি তুমি লইয়াছ— আমার সমস্ত আনন্দোচ্ছ্বাস আমার সমস্ত দুঃখবেদনা কি তুমি গ্রহণ করিয়াছ? আমি যেখানে “অকৃত কার্য, অকথিত বাণী, অগীত গান, বিফল বাসনারাশি” লইয়া
৫৯