জীবনের বিস্মৃত স্মৃতিকে বহন করিতেছে বলিয়াই আমাদের ব্যক্তিত্ব এত জটিল হইয়াছে। আমরা এক মানুষ নহি— আমাদের মধ্যে নানা জীব-ভাব কাজ করিতেছে। অথচ এ সকল বৈচিত্র্য আমাদের এক ব্যক্তিত্বে মিলিতও হইতেছে আশ্চর্যরূপে। এখানে এ আলোচনা সম্ভবপর নহে, কিন্তু আমার এ ব্যাখ্যার পোষকতাস্বরূপ আমি এ কথাটা উত্থাপন করিলাম মাত্র।
অতএব সমস্ত জগতের তরুলতা- পশুপক্ষীর সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে কবির যে নাড়ীর যোগের কথা আমরা তাঁহার নানা কবিতায় পাইয়াছি তাহার ভিতর কবির আমিত্বের যে তত্ত্বটি আছে তাহা এই— এই আমিকে ‘আমি’র স্বামী জীবনদেবতা সমস্ত বিশ্ব অভিব্যক্তির ভিতর দিয়া সেই প্রথম বাষ্প নীহারিকা, পৃথিবীর আদিম তরুলতা হইতে আরম্ভ করিয়া সরীসৃপ পক্ষী পশু প্রভৃতি বিচিত্র প্রাণীপর্যায়ের ভিতর দিয়া, এই বর্তমান জীবনের মধ্যে উদ্ভিন্ন করিয়াছেন। জীবনদেবতা কেবল যে এই জীবনের ‘আমি’র সমস্ত সুখদুঃখ সৌন্দর্যবোধ ও প্রেমকে বিশ্বব্যাপী পরিপূর্ণতার দিকে এক করিয়া তুলিতেছেন তাহা নহে, তিনিই বিশ্ব-অভিব্যক্তির নানা অবস্থার ভিতর দিয়া প্রবাহিত এই ‘আমি’রই একটি অখণ্ড সূত্রকে অনাদিকাল হইতে ধারণ করিয়া আছেন:
আজ মনে হয় সকলের মাঝে
তোমারেই ভালোবেসেছি,
জনতা বাহিয়া চিরদিন শুধু
তুমি আর আমি এসেছি।
“বসুন্ধরা”, “প্রবাসী”, “সমুদ্রের প্রতি” প্রভৃতি কবিতায় এই জলস্থল-আকাশের সঙ্গে একাত্মকতার ভাবটিই প্রকাশ পাইয়াছে।
৬৩