ফুটত এবং নবপল্লব উদ্গত হত।...তার পরেও নব নব যুগে এই পৃথিবীর মাটিতে আমি জন্মেছি। আমরা দুজনে একলা মুখোমুখি ক’রে বসলেই আমাদের সেই বহুকালের পরিচয় যেন অল্পে অল্পে মনে পড়ে।’
আমার মনে হয় ‘সোনার তরী’তে এবং বিশেষভাবে ‘চিত্রা’তে ও ‘চৈতালি’তে রবীন্দ্রনাথের কাব্যজীবন খুব একটি সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়াছে।
জীবনদেবতার কথা বলিলাম— প্রেম, সৌন্দর্যবোধ, সমস্তই এই জীবনদেবতার বৃহৎভাবের দ্বারা কত বড় বিশ্বব্যাপকতা লাভ করিয়াছে তাহা তো দেখিতেই পাওয়া যাইতেছে। “স্বর্গ হইতে বিদায়” এর কথা পূর্বেই বলিয়াছি। এখন আর একটিমাত্র কবিতার কথা বলিব। সে কবিতাটি “উর্বশী”।
সৌন্দর্যবোধের মধ্যে ভোগপ্রবৃত্তির মোহাবেশ মিশিয়া যে বেদনাকে জাগাইয়াছিল তাহা আমরা ‘কড়ি ও কোমলে’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’য় দেখিয়া আসিয়াছি। “উর্বশী” এবং “বিজয়িনী” যে দুইটি কবিতা চিত্রায় আছে তাহার মধ্যে সৌন্দর্যকে সমস্ত মানবসম্বন্ধের বিকার হইতে, সমস্ত প্রয়োজনের সংকীর্ণ সীমা হইতে দূরে তাহার বিশুদ্ধতায় তাহার অখণ্ডতায় উপলব্ধি করিবার তত্ত্ব আছে।
আপনারা মনে রাখিবেন যে, চিত্রার এ-সকল কবিতাই “জীবনদেবতা”র অখণ্ডভাবের অন্তর্গত। ক্ষণিকের মধ্যে, বিচ্ছিন্নের মধ্যে অখণ্ডের উপলব্ধি “জীবনদেবতা”র ভিতরের কথা। অনিত্য স্নেহপ্রীতির সম্বন্ধকে অনন্তরহস্যময় করিয়া দেখিবার কথা “স্বর্গ হইতে বিদায়” কবিতাটিতে বলা হইয়াছে বলিয়া তাহা “জীবনদেবতা”রই ভাবের অন্তর্ভুক্ত কথা; এবং জগতের বিচিত্রচঞ্চল সৌন্দর্য যে সকল-
৬৫