সম্বন্ধাতীত এক খণ্ড সৌন্দর্যে নিবিড়লীন, “উর্বশী”র এ কথাও জীবনদেবতার ভাবের অন্তর্গত।
বাস্তবিক “উর্বশী”র ন্যায় সৌন্দর্যবোধের এমন পরিপূর্ণ প্রকাশ সমগ্র ইউরোপীয় সাহিত্যে কোথাও আছে কি না সন্দেহ। সৌন্দর্য সমস্ত প্রয়োজনের বাহিরে, সে আপনাতে আপনি সম্পূর্ণ একটি সত্তা। জগতের কোন্ রহস্যসমুদ্রের গোপন অতলতার মধ্যে তাহার সৃষ্টি! সমস্ত বিশ্ব-সৌন্দর্যের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে তাহার বিদ্যুৎ-চঞ্চল আঁচল দোলানোর আভাস পাওয়া যাইতেছে:
তোমারি কটাক্ষঘাতে ত্রিভুবন যৌবনচঞ্চল,
তোমার মদির গন্ধ অন্ধবায়ু বহে চারি ভিতে···
নূপুর গুঞ্জরি যাও আকুল-অঞ্চলা
বিদ্যুৎ-চঞ্চলা।
ইহারই নৃত্যের ছন্দে ছন্দে সিন্ধুর তরঙ্গ উচ্ছ্বসিত, শস্যশীর্ষে ধরণীর শ্যামল অঞ্চল কম্পিত, ইহারই স্তনহারচ্যুত মনিভূষণ অনন্ত আকাশে তারায় তারায় বিকীর্ণ, বিশ্ববাসনার বিকশিত পদ্মের উপরে ইহার অতুলনীয় পাদপদ্ম স্থাপিত।
সুরসভাতলে যবে নৃত্য কর পুলকে উল্লসি,
হে বিলোলহিল্লোল উর্বশী,
ছন্দে ছন্দে নাচি উঠে সিন্ধু-মাঝে তরঙ্গের দল,
শস্যশীর্ষে শিহরিয়া কাঁপি উঠে ধরার অঞ্চল,
তব স্তনহার হতে নভস্থলে খসি পড়ে তারা,
অকস্মাৎ পুরুষের বক্ষোমাঝে চিত্ত আত্মহারা—
নাচে রক্তধারা।
৬৬