বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিগন্তে মেখলা তব টুটে আচম্বিতে,
অয়ি অসম্বৃতে।

 পাঠকেরা এই জায়গায় “প্রতিধ্বনি” কবিতাটি স্মরণ করিবেন। আমি সেখানে বলিয়াছি যে, সুর যেমন প্রত্যেক কথাটির মধ্যে অনির্বচনীয়কে উদ্ঘাটন করে, রবীন্দ্রনাথের হৃদয় সেইরূপ সমস্ত দেখার সঙ্গে সঙ্গে একটি অপরূপকে দেখিয়া তৃপ্তিলাভ করিতে চায়। উর্বশী সেই সমস্ত রূপের মধ্যে অপরূপের দৃষ্টি। এ এক আশ্চর্য কাব্য— সৌন্দর্যের এমন সুতীব্র অথচ নির্মল অনুভূতি অন্যত্র দেখি নাই।

 জীবনের এক পর্ব এইখানেই শেষ। এইবার আমরা যেখানে যাত্রা করিব সেখানে এই কাব্যজীবনের সঙ্গে একটা বিচ্ছেদের সূত্রপাত। কেন? আমাদের তো মনে হয় এইখানে কবি তাঁহার কবিত্বের উচ্চতম শিখরে আরোহণ করিয়াছেন, মানুষের মধ্যে বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে এমন সত্য প্রবেশ, জীবনকে মৃত্যুকে প্রেমকে সৌন্দর্যবোধকে এমন এক অখণ্ড জীবনের সূত্রে পরিপূর্ণ করিয়া দেখা, ইহার মধ্যে অভাব কোথায়?

 জীবনেরও এমন পূর্ণ আয়োজনটি! জমিদারির কাজ— তাহার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অমন সুন্দর উপভোগ— নদীর উপরে বোটে করিয়া দিনরাত্রি আনন্দে যাপন, ‘সাধনা’র জন্য গদ্যে পদ্যে বিচিত্র রচনাকার্য— সকল দিক হইতে এমন আয়োজন আর কোথায় মিলিবে? চৈতালির কবিতাগুলি এবং এই সময়কার চিঠিগুলি পড়িলে বেশ বুঝিতে পারা যায়, কী মাধুর্যের স্রোতের মধ্যে এই সময়ের মধ্যে প্রত্যেকটি দিন এবং প্রত্যেকটি রাত্রি ফুলের মতো ফুটিয়া উঠিয়া নিরুদ্দেশ যাত্রায় ভাসিয়া ভাসিয়া গিয়াছে।

 একটা চিঠিতে আছে:

 ‘আমি প্রায় রোজই মনে করি, এই তারাময় আকাশের নীচে আবার

৬৭