কি কখনো জন্মগ্রহণ করব? যদি করি আর কি কখনো এমন প্রশান্ত সন্ধ্যাবেলায় এই নিস্তব্ধ গোরাই নদীটির উপরে বাংলাদেশের এই সুন্দর একটি কোণে এমন নিশ্চিন্ত মুগ্ধ মনে... প’ড়ে থাকতে পারব?’
আর একটি চিঠির খানিকটা দিই:
‘আমার এই পদ্মার উপরকার সন্ধ্যাটি আমার অনেক দিনের পরিচিত— আমি শীতের সময় যখন এখানে আসতুম এবং কাছারি থেকে ফিরতে অনেক দেরি হত, আমার বোট ওপারের বালির চরের কাছে বাঁধা থাকত— ছোট জেলে-ডিঙি চ’ড়ে নিস্তব্ধ নদীটি পার হতুম, তখন এই সন্ধ্যাটি সুগভীর অথচ সুপ্রসন্ন মুখে আমার জন্যে অপেক্ষা ক’রে থাকত— আমার জন্যে একটি শান্তি একটি কল্যাণ একটি বিশ্রাম সমস্ত আকাশময় প্রস্তুত থাকত— সন্ধ্যাবেলাকার নিস্তরঙ্গ পদ্মার উপরকার নিস্তব্ধতা এবং অন্ধকার ঠিক যেন নিতান্ত অন্তঃপুরের ঘরের মতো বোধ হত। এখানকার প্রকৃতির সঙ্গে সেই আমার একটি মানসিক ঘরকন্নার সম্পর্ক, সেই একটি অন্তরঙ্গ আত্মীয়তা আছে যা ঠিক আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। সেটা যে কতখানি সত্য তা বললেও কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। জীবনের যে গভীরতম অংশ সর্বদা মৌন এবং সর্বদা গোপন, সেই অংশটি আস্তে আস্তে বের হয়ে এসে এখানকার অনাবৃত সন্ধ্যা এবং অনাবৃত মধ্যাহ্নের মধ্যে নীরব নির্ভয়ে সঞ্চরণ করে বেড়িয়েছে। আমাদের (দুটো) জীবন আছে একটা মনুষ্যলোকে আর একটা ভাবলোকে— সেই ভাবলোকের জীবনবৃত্তান্তের অনেকগুলি পৃষ্ঠা আমি এই পদ্মার উপরকার আকাশে লিখে গেছি।’
সোনার তরী, চিত্রা ও চৈতালির এই মাধুর্যরসপূর্ণ জীবনের সঙ্গে কথা, কল্পনা, ক্ষণিকা প্রভৃতি পরবর্তী কাব্যের জীবনের যে বিচ্ছেদ তাহা এমন গুরুতর যে এ দুইটাকে দুইজন স্বতন্ত্র লোকের জীবন বলিলেও
৬৮