Abt Vogler নামক কবিতায় মিডিভ্যাল গায়কের ন্যায় শিল্পীদের জীবনে কল্পনায় অকস্মাৎ সমস্ত বাস্তব আপনার সীমারূপ পরিহার করিয়া অখণ্ড-গীতস্বর্গলোকে উঠিয়া পড়ে বটে, কিন্তু কল্পনার পরিপূর্ণ মুহূর্তের অবসানে অবসাদের অতলতায় তলাইয়া যায়— জীবনের চারি দিকে তখন আনন্দের কোনো বার্তাই খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।
সেই জন্য আমার মনে হয় যে, শিল্পপ্রাণ জীবন কখনোই আধ্যাত্মিক জীবনের স্থান অধিকার করিতে সমর্থ হয় না— শিল্প মানুষের চরম আশ্রয় নহে। আত্মার যাত্রাপথে সমস্ত খণ্ড আশ্রয় একে একে খসিয়া পড়িতে বাধ্য।
অথচ ইহাও দেখা যায় যে, মানুষ যখনই কোনো খণ্ড সত্যকে নিত্য সত্যের আসন দেয়, তখন তাহার পক্ষ হইয়া অনেক বাজে ওকালতি করিয়া থাকে। ইউরোপের একদল শিল্পী আর্টের বাড়া আর কিছুই দেখিতে পান না— ধর্মকে ‘ডগ্ মা’ অর্থাৎ মত মাত্র মনে করিয়া ইঁহারা বলিতে চান যে আর্টেই জীবন্ত ধর্মের প্রকাশ—কারণ সমস্ত জিনিসকে তাহার নিত্য সত্যে ও নিত্য সৌন্দর্যে দেখাই আর্টের প্রধানতম কাজ।
রবীন্দ্রনাথও এক সময়ে এই আর্টের জীবনের খুব ভিতরে ছিলেন বলিয়া এ-সকল কথা ঠিক এই দিক দিয়াই ভাবিতেন। তাহার প্রমাণ একটি পত্রে পাই:
‘সমস্ত প্রকৃতির সঙ্গে আমার যে খুব একটা নিগূঢ় অন্তরঙ্গ সত্যিকার সজীব সম্পর্ক আছে... সেই প্রীতি সেই আত্মীয়তাকেই... আমি যথার্থ সর্বোচ্চ ধর্ম ব’লে জ্ঞান এবং অনুভব করি।... আমার যে ধর্ম এটা নিত্য ধর্ম, এর উপাসনা নিত্য উপাসনা। কাল রাস্তার ধারে একটা ছাগমাতা গম্ভীর অলস স্নিগ্ধভাবে ঘাসের উপর বসে ছিল এবং তার ছানাটা তার গায়ের উপর ঘেঁষে পরম নির্ভয়ে গভীর আরামে পড়ে ছিল— সেটা দেখে
৭০