বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার মনে যে একটা সুগভীর রসপরিপূর্ণ প্রীতি এবং বিস্ময়ের সঞ্চার হল আমি সেইটেকেই আমার ধর্মালোচনা বলি— এই সমস্ত ছবিতে চোখ পড়বা মাত্রই সমস্ত জগতের ভিতরকার আনন্দ এবং প্রেমকে আমি অত্যন্ত প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎভাবে আমার অন্তরে অন্তরে অনুভব করি— এ ছাড়া অন্যান্য যা কিছু dogma আছে যা আমি কিছুই জানি নে এবং বুঝি নে এবং বোঝবার সম্ভাবনা দেখি নে তা নিয়ে আমি কিছুমাত্র ব্যস্ত হই নে।’

 অথচ শিল্প দর্শন ধর্ম প্রভৃতি সমস্তই যে অধুনা ক্রমশ মিলিবার পথে চলিয়াছে এবং এ-সকল ভিন্ন ভিন্ন সাধনার সমন্বয় করাই যে পরিপূর্ণ জীবনের আদর্শ হইয়া উঠিতেছে, ইউরোপীয় কোনো কোনো ভাবুকের লেখায় আজকাল এমনতর আভাস পাওয়া যায়। তাহার কারণ এই যে, খুব সম্প্রতি নানা কারণে ইউরোপীয় মন বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছে যে বৈচিত্র্যকে সাজাইলেই তাহাকে মেলানো হয় না— তাহাতে বৈচিত্র্যের ভেদচিহ্নগুলি সমানই থাকিয়া যায়। একমাত্র আধ্যাত্মিকতার অখণ্ড বোধের মধ্যেই সমস্ত ভেদের বিলোপ এবং সমস্ত বৈচিত্র্যের মিলন ঘটিতে পারে।

 কবীরের বচন আছে:

জো তন পায়া  খণ্ড দেখায়া
তৃস্না নহীঁ বুঝানী।
অমৃত ছোড়  খণ্ড রস চাখা
তৃস্না তাপ তপানী।

অর্থাৎ যে তনুলাভ করিয়াছে সে খণ্ড দেখিয়াই চলিয়াছে, তাহার তৃষ্ণা আর মিটে না। অমৃত ছাড়িয়া সে খণ্ডরসই পান করিতেছে, তৃষ্ণা তাহাকে সন্তপ্ত করিয়াই চলিয়াছে।

৭১