খণ্ডতাকে জোড়া দিয়া বড় আকার দান করিবার দিকে আপনার চেষ্টাকে প্রয়োগ করিবার জন্য ইউরোপে শিল্পসাধনাও অন্যান্য সাধনার ন্যায় আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সম্মিলিত হইয়া পূর্ণ হইয়া উঠে নাই। সে “অমৃত ছোড় খণ্ডরস চাখা”। হয়তো তাহার ভিতরকার কারণ, ইউরোপ যে ধর্ম পাইয়াছে তাহার অসম্পূর্ণতা; যে জন্য উত্তরোত্তর বিকাশমান জ্ঞানের সাধনা ও সৌন্দর্যের সাধনার সঙ্গে সে ধর্ম আপনার যোগকে স্থাপিত করিতে অক্ষম হইয়া বরাবর বাহিরেই পড়িয়া গিয়াছে। বাস্তবিকই খ্রীস্টধর্মের মধ্যে অদ্বৈততত্ত্বের অভাব থাকিবার জন্য সে কিছুই মিলাইতে পারিতেছে না— ভেদবুদ্ধির দ্বন্দ্বযুদ্ধে তত্ত্বের রাজ্য খণ্ড খণ্ড হইয়া যাইতেছে— সেইজন্যই আধুনিক কালে কি আর্টে, কি দর্শনে, খ্রীস্টধর্মকে নূতন করিয়া গড়িয়া সকল বিরোধের মিলনসেতুস্বরূপ দাঁড় করাইবার জন্য পুনরায় ইউরোপের মধ্যে বিপুল প্রয়াস লক্ষিত হইতেছে।
আমার এত কথা বলিবার অভিপ্রায় আর কিছুই নয়, কেবল এই যে, আর্টের জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি যদি আধ্যাত্মিক জীবনে না হয় তবে মাঝখানের অভিব্যক্তিটাই আমরা দেখিতে পাই খুব জাঁকালো রকম— তখন এমন একটা নদীর দীর্ঘ বিচিত্র ধারা আমরা দেখি যাহার কোনো শান্তিসমুদ্রের মধ্যে অবসান ঘটে নাই, হঠাৎ এক জায়গায় যাহার ধারা বালুমরুর মধ্যে শোষিত হইয়া গিয়াছে।
সুতরাং আর্টের ভিতর হইতে মানবজীবনের পরিপুর্ণতার আদর্শ দেখিতে পাইলেও এ ভুল যেন না করি যে ইহাই পর্যাপ্ত— ধর্মের আর কোনো প্রয়োজন নাই, সে ‘ডগ মা’ অথবা শুষ্ক মত মাত্র। ইহা মনে রাখিতে হইবে যে, অনুভূতি এবং প্রকাশ এক জিনিস এবং জীবন অন্য জিনিস। আর্টের প্রকাশও এক জায়গায় থামিয়া নাই— জীবনের
৭২