বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে সেও বিচিত্র হইয়াই চলে। আর্টের স্বাভাবিক পরিণাম আধ্যাত্মিকতায় ছাড়া হইতেই পারে না— নদীর যেমন স্বাভাবিক অবসান সমুদ্রে।

 আমার বিশ্বাস ‘সোনার তরী’ ও ‘চিত্রা’র জীবন হইতে বিদায় লইবার প্রধান কারণ কেবলমাত্র শিল্পময় জীবনের অসম্পূর্ণতা কবিকে ভিতরে ভিতরে বেদনা দিতেছিল।

 ইহার সঙ্গে আর একটি কারণও আমার মনে হয়, বড় কর্মক্ষেত্রের অভাব। অবশ্য পরিপূর্ণ জীবনের অভাববোধেরই তাহা অন্তর্গত। জমিদারি ব্যবস্থার কর্ম খুব বড় করিয়া করিলেও তাহাতে সম্পূর্ণ আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা হয় না। সে কর্মের মধ্যে স্বার্থের একটা সংকীর্ণ দিক আছে, সুতরাং অনেক বিষয়ে আপনাকে কষ্ট দিয়া এবং আপনার আদর্শকে ক্ষুণ্ণ করিয়া চলিতে বাধ্য হইতে হয়। যে কর্ম সমস্ত মানুষের যোগে সম্পন্ন হয়, যাহা কোনো সংকীর্ণ প্রয়োজনের সীমায় আবদ্ধ নহে, যাহার ফল দূর ভবিষ্যতের মধ্যে নিহিত, যাহার নিকটে সম্পূর্ণভাবে আত্মোৎসর্গ করিয়া মানুষ মঙ্গলের আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া উঠে, তেমন একটি বিস্তীর্ণ কর্মের ক্ষেত্র কবির পক্ষে একান্ত প্রয়োজন ছিল। আমাদের দেশে নাকি তেমন কোনো বৃহৎ কর্মের প্রতিষ্ঠান নাই, সেইজন্য আমরা পরে দেখিতে পাইব যে তাঁহাকে নিজের চেষ্টায় সেই রকম একটি কর্মক্ষেত্র, একটি তপস্যার ক্ষেত্র রচনা করিতে হইয়াছে।

 সাধনা কাগজখানিতে রবীন্দ্রনাথের যে অত উৎসাহ ছিল তাহার ও প্রধান কারণ, সকল দিক হইতে দেশকে ভাবাইবার ও মাতাইবার একটা আকাঙ্ক্ষা তাঁহার মনকে অধিকার করিয়াছিল। সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন— সকল বিষয়েই একজন লোকের

৭৩