মনন-শক্তিকে যদি সচেতন রাখতে হয়, যা কিছু পাওয়া যায় তাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করবার শক্তিকে যদি উজ্জ্বল রাখতে হয়, তা হলে হৃদয়টাকে সর্বদা আধপেটা খাইয়ে রাখতে হয়— নিজেকে প্রাচুর্য থেকে বঞ্চিত করতে হয়।··· কেবল হৃদয়ের আহার নয়, বাইরের সুখস্বাচ্ছন্দ্য জিনিসপত্রও আমাদের অসাড় ক’রে দেয়— বাইরে সমস্ত যখন বিরল তখনি নিজেকে ভালো রকমে পাওয়া যায়।···
‘কিন্তু তপস্যা আমার স্বেচ্ছাকৃত নয়, সুখ আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়, তবু বিধাতা যখন বলপূর্বক আমাকে তপশ্চরণে প্রবৃত্ত করিয়েছেন তখন বোধ হয় আমার দ্বারা তিনি একটা বিশেষ কিছু ফল পেতে চান— শুকিয়ে গুঁড়িয়ে পুড়ে ঝুড়ে সবশেষে বোধ হয় এ জীবনের থেকে একটা কিছু কঠিন জিনিস থেকে যাবে। মাঝে মাঝে তার আবছায়া রকম অনুভব পাই।’
কল্পনা, কথা, কাহিনী, ক্ষণিকা এ কাব্যগুলি প্রায় একই সময়ের লেখা— ১৩০৪ হইতে ১৩০৭ এর মধ্যে। ১৩০৮-এ নৈবেদ্য প্রকাশিত হইয়াছে। কল্পনা কথা প্রভৃতিতে দেশবোধের সূচনা মাত্র আছে; নৈবেদ্য হইতে তাহার প্রকৃত আরম্ভ। কল্পনা কথা প্রভৃতির রচনার মধ্যে বর্তমানের বন্ধন হইতে আপনাকে ছিন্ন করিয়া প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের মধ্যে এবং কাব্য পুরাণের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িবার একটা চেষ্টা লক্ষ করা যায়।
এই চেষ্টার ভিতরে একটি বেদনা আছে। সন্ধ্যার ছায়াটি পড়িয়া আসিয়াছে, রূপকথার রাজপ্রাসাদের ভগ্নমহাল-মালার ন্যায় পশ্চিমদিগন্তে অস্তমান রবির সিন্দুররাগ অস্পষ্টপ্রায়, অন্ধকারসমুদ্রের উপরে শুভ্রপালখচিত স্বপ্নতরীর মতো দু-একটি তারা ভাসিয়া উঠিতেছে— সেই সময়ে অজানালোকের সৌন্দর্যরহস্যের অস্পষ্ট-আভাসের যেমন
৭৫