আবার চলিনু ফিরে বহি ক্লান্ত নত শিরে
তোমার আহ্বান।
‘কল্পনা’র এই বিদায়ের বিষণ্ণ সুর অকস্মাৎ “বর্ষশেষে”র ঝড়ের কবিতায় কবির বীণাতন্ত্রে ‘খরতর ঝঙ্কারঝঞ্ঝনা’য় আহত হইয়া লুপ্ত হইয়া গেল। পুরাতন ক্লান্ত বর্ষের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে কবিরও পুরাতন কাব্যজীবনকে বিদায় দেওয়া হইল।
প্রতি বৎসরে যে ‘নূতন’ বসন্তের আবেশহিল্লোলে মর্মরিত কূজনে গুঞ্জনে আসিয়া উপস্থিত হয়, সেবার বর্ষশেষের ঝড়ের দিনে সেভাবে তাহার আবির্ভাব হয় নাই। জীবনেরও মধ্যে সেই ঝড়েরই মতো সে নূতনের কি আশ্চর্য কি ভয়ংকর আবির্ভাব!
রথচক্র ঘর্ঘরিয়া এসেছ বিজয়ীরাজসম
গর্বিত নির্ভয়—
বজ্রমন্ত্রে কি ঘোষিলে বুঝিলাম নাহি বুঝিলাম—
জয় তব জয়।
ফুলের মতো জীর্ণ পুষ্পদলকে ধ্বংস ভ্রংশ করিয়া পুরাতন জীবনের পর্ণপুটকে দীর্ণবিকীর্ণ করিয়া এই ‘নূতন’ জীবনের মধ্যে পরিপূর্ণ আকারে প্রকাশিত! তাহার উদার আমন্ত্রণে সমস্ত বিতর্ক-বিচার, সমস্ত বন্ধনক্রন্দন, সমস্ত খিন্ন জীবনের ধিক্কার লাঞ্ছনাকে একেবারে দূরে অপসারিত করিয়া প্রাণ ছুটিয়া বাহির হইয়াছে:
লাভক্ষতি-টানাটানি, অতি সূক্ষ্ম ভগ্ন-অংশ-ভাগ,
কলহ সংশয়—
সহে না সহে না আর জীবনেরে খণ্ড খণ্ড করি
দণ্ডে দণ্ডে ক্ষয়।
৭৯