করিতেছে— ‘বর্ষশেষে’র রুদ্রক্রন্দনচ্ছন্দে যে বাণীর খানিকটা পরিচয় পাওয়া গিয়াছে।
বিশ্বের মূলে ঐশ্বর্য এবং বৈরাগ্য যে দুই রূপ এপিঠ ওপিঠের মতো পরস্পরের সঙ্গে পরস্পর লাগিয়া আছে, তাহার প্রথমটির সঙ্গে এতদিন কবির ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল, দ্বিতীয়টির ছবিও যে তাঁহার জানা ছিল না তাহা নহে— কিন্তু এখনকার মতো এমন মুখামুখি পরিচয় হয় নাই। ‘বর্ষশেষে’ সেই শেষোক্ত রূপই ‘নূতন’ হইয়া কবির নিকটে পরিপূর্ণ আকারে প্রকাশ পাইয়াছিল, ‘বৈশাখে’ সেই রূপই তপঃক্লিষ্ট তপ্ততনু লইয়া তাহার যজ্ঞকুণ্ডে সমস্ত সুখদুঃখকে আহুতি দেওয়াইল। এ রূপ অন্নপূর্ণার রূপ নয়, এ রূপ শিবের রূপ, এ রূপ রিক্ততার রূপ!—
ওগো কাঙাল, আমারে কাঙাল করেছ,
আরো কি তোমার চাই!
ওগো ভিখারী, আমার ভিখারী চলেছ
কী কাতর গান গাই!
এই পরমরিক্ত কাঙাল রূপ আমাদের জীবনকেও নিঃশেষে রিক্ত না করিয়া ছাড়েন না। জীবনকে যতক্ষণ ইহার কাছে ফেলিয়া না দিই ততক্ষণ সে কী ক্ষুদ্র, কী বন্ধনে জর্জরিত, তাহার ভার কী দুঃসহ— তাহার চারি দিকে কোথাও কোনো ফাঁক নাই— আপনাকে লইয়া তাহার কী কান্না! অথচ ভোগের মধ্যে কবির জীবন অত্যন্ত বেশি জড়িত বলিয়া সহজে এই রিক্ততাকে বরণ করিবার শক্তিও তাঁহার নাই, তিনি কেবলই কাঁদিয়া গাহিতে থাকেন:
সখি, আমারি দুয়ারে কেন আসিল,
নিশিভোরে যোগী ভিখারী!
কেন করুণ স্বরে বীণা বাজিল!
৮১