বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমি   আসি যাই যতবার চোখে পড়ে মুখ তার—
তারে   ডাকিব কি ফিরাইব তাই ভাবি লো।

সেইজন্ম ইতিহাসের মধ্যে যেখানে মানুষ অনায়াসেই ত্যাগ করিয়াছে, বিনা বিতর্কে বৃহৎ ভাবের আনন্দে প্রাণ দিয়াছে, সেইখানে মানুষের শক্তির সেই বৃহৎ লীলাক্ষেত্রে মানুষের বিরাট মূর্তিকে দেখিবার জন্য কবির চিত্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিল।

 ‘কথা’ কাব্যটির প্রায় সকল ঐতিহাসিক চিত্রগুলিই এই ত্যাগের কাহিনী। বৌদ্ধযুগে এবং শিখ ও মাহারাট্টা জাতিদের অভ্যুদয়কালে মধ্যযুগে ভারতবর্ষের উপর দিয়া ধর্মের বড় বড় প্লাবন বহিয়া গিয়াছিল। ইতিহাস তাহার কথা অল্পই লিখিয়া থাকে, তাহার কারণ ভারতবর্ষের অন্তরতম জীবনের ভিতর হইতে ইতিহাস এখনও তৈরি হইয়া উঠে নাই। ঐ-সকল যুগে ভারতবর্ষ তখনকার জাতীয় জীবনবীণাকে ত্যাগের সুরে খুব কঠিন করিয়া বাঁধিবার চেষ্টা করিয়াছিল।

 সে কী রকমের ত্যাগ? যে ত্যাগের আবেগে নারী আপনার লজ্জা ভুলিয়া একমাত্র পরিধেয় বসন প্রভু বুদ্ধের নামে উৎসর্গ করিয়া দিয়াছে, আপনার ভোগের উৎসৃষ্ট অংশ হইতে কিছু দেওয়াকে ত্যাগ মনে করে নাই— যে ত্যাগ নৃপতিকে ভিখারীর বেশ পরিধান করাইয়া দীনতম সন্ন্যাসী সাজাইয়াছে, পূজারিনী রাজদণ্ডের ভয়কে তুচ্ছ করিয়া পূজার জন্য প্রাণ বিসর্জন করিয়াছে— যে ত্যাগের আনন্দে ভক্ত অপমানকে বর বলিয়া জ্ঞান করিয়াছেন, শূরেরা বীরেরা প্রাণকে তৃণের মতোও মনে করেন নাই— সেই-সকল ত্যাগের কাহিনীই ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের ভিতর হইতে রবীন্দ্রনাথ জাগাইয়া তুলিলেন।

 আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ইহার পূর্বে কবির ঐতিহাসিক চেতনা জিনিসটারই অভাব ছিল। ব্যক্তিগত সুখদুঃখের ঘাতপ্রতিঘাতকে

৮২