একটা বড় কালের অভিপ্রায়ের মধ্যে ফেলিয়া বিশ্ব মানবের বড় বড় ভাঙাগড়ার ব্যাপারের সঙ্গে মিলাইয়া দেখিবার কোনো চেষ্টা তাঁহার রচনার পূর্বে লক্ষিত হয় নাই। তাহার কারণ আমাদের জাতীয় জীবনের পরিধি তখন অত্যন্ত সংকীর্ণ ছিল— আমাদের নাটকে উপন্যাসে আমরা ‘ঘোরো’ দিক হইতেই মানবজীবনকে চিত্রিত করিতাম— আমাদের দেশে ধর্মে ও সমাজে যে-সকল আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল তাহাদেরও কারণকে খুব দূরে, দেশের অতীত ইতিহাসের অন্তর্গত করিয়া, দেখিতে পাইতাম না; মনে করিতাম তাহা যেন ব্যক্তিবিশেষের সৃষ্টি। সাহিত্য সমালোচনাও করিতাম এমন ভাবে যাহাতে সাহিত্য জিনিসটাও একান্তই লেখকবিশেষের সম্পত্তির মতো হইয়া উঠিত— তিনি ইচ্ছা করিলেই যেন তাহার পরিবর্তন করিতে পারেন। সমস্ত দেশের মানসাকাশে যে ভাবহিল্লোল জাগিয়া উঠে তাহারই বাষ্প যে জমাট বাঁধিয়া সাহিত্যরূপ ধারণ করে, সমস্ত দেশের সকল চেষ্টা ও চিন্তার সঙ্গে সাহিত্যকে এমন করিয়া যুক্ত করিয়া দেখিতেই জানিতাম না।
রবীন্দ্রনাথ যদিচ নিজের অন্তরতর অভাববশতঃ প্রাচীন ইতিহাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিলেন, তথাপি এ কথা নিঃসন্দেহ জানিতে হইবে যে, সমস্ত দেশে এই দিকে একটা নাড়াচাড়া চলিতেছিল। পাশ্চাত্য সভ্যতার একটা উগ্র প্রতিক্রিয়া অনেক দিন হইতে আরম্ভ হইয়াছিল— আমাদের সমাজ যে ব্যক্তিপ্রধান নয়, আমাদের দেশে ব্যক্তি যে সমাজের অধীন— এ সকল কথা বলিয়া সমাজের গৌরব-গান নব্য হিন্দুদলের মধ্যে গাওয়াও হইতেছিল অতিমাত্রায়— অর্থাৎ দেশ যে একটা কাল্পনিক পদার্থমাত্র নহে, একটা সত্য বস্তু, ইহা অনুভব করিবার একটা আয়োজন চলিতেছিল!
রবীন্দ্রনাথের স্বাদেশিক জীবনের কথা বলিবার সময়ে এ সকল
৮৩