বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিষয়ে আলোচনা করা যাইবে। কবির নিজের জীবন আপনার পথ আপনি কেমন করিয়া কাটিয়া চলিয়াছে তাহাই আমরা দেখিতেছিলাম। কিন্তু সেই সঙ্গে সঙ্গে, মহাকাল যে চুপ করিয়া বসিয়াছিলেন না, এ দেশের মধ্যেও নানা ছোটখাট আন্দোলন-উদ্যোগে একটা পরিবর্তনস্রোত অনেক মানুষের হৃদয়ের উপর দিয়া প্রবাহিত হইতেছিল, সে কথা যেন আমরা ভুলিয়া না যাই।

 ‘কল্পনা’ ‘কথা’ও ‘কাহিনী’র মধ্যে যেমন এই একভাবের অবিচ্ছিন্ন ধারা দেখা গেল, ‘ক্ষণিকা’র মধ্যেও মোটামুটি এই ভাবেরই ধারা বহিয়া চলিয়াছে; তথাপি এ কাব্যখানির বিশেষ একটু স্বাতন্ত্র্য আছে। একটি উজ্জ্বল কৌতুকলীলার তরঙ্গে ‘ক্ষণিকা’র সমস্ত কবিতাগুলি টলমল করিতেছে— এমন স্বচ্ছ এমন অনায়াস প্রকাশ রবীন্দ্রনাথের আর কোনো কাব্যের মধ্যে দেখা গিয়াছে কিনা সন্দেহ। ইহার মধ্যেও পূর্বোল্লিখিত কাব্যগুলির ন্যায় গতজীবনের সঙ্গে বিচ্ছেদের একটা কান্না আছে। কিন্তু:

তোমারে পাছে সহজে বুঝি
তাই কি এত লীলার ছল?
বাহিরে যবে হাসির ছটা
ভিতরে থাকে আঁখির জল।

 আমার মনে হয়, সূর্যাস্ত এবং সন্ধ্যার অন্ধকারের সন্ধিস্থলে আকাশ যেমন অকস্মাৎ অত্যন্ত সুতীব্ররূপে রাঙা হইয়া উঠে, সেইরূপ ‘ক্ষণিকা'য় নির্বাপিত প্রায় কবিজীবনশিখা আকস্মিক ঔজ্জ্বল্যে চোখ ধাঁদিয়া আপনাকে নিঃশেষে প্রকাশ করিয়াছে।

 এখানে একটি কথা বলা আবশ্যক। ‘ক্ষণিকা’তেই প্রথমে কবি বাংলা কথিত ভাষা ব্যবহার করেন। কথিত ভাষার একটা সুবিধা

৮৪