বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকের চাপল্য তাঁহারা সহ্য করিতে অক্ষম। ইহার মধ্যে যে-একটি মুক্ত প্রাণের হাওয়া বহিয়াছে, সৌন্দর্যমুক্ত প্রকৃতির একটি ভারশূন্য লঘু আনন্দলীলা যে খেলিয়া গিয়াছে, সে খেলায় যোগ দিতে ইঁহারা চান না, ইঁহাদের বয়সোচিত গাম্ভীর্য তাহাতে রক্ষা হয় না।

ওরে মাতাল, দুয়ার ভেঙে দিয়ে
পথেই যদি করিস মাতামাতি,
থলিঝুলি উজাড় ক’রে ফেলে
যা আছে তোর ফুরাস রাতারাতি,
অশ্লেষাতে যাত্রা ক’রে শুরু
পাঁজিপুঁথি করিস পরিহাস,
অকারণে অকাজ লয়ে ঘাড়ে
অসময়ে অপথ দিয়ে যাস,
হালের দড়ি নিজের হাতে কেটে
পালের পরে লাগাস ঝোড়ো হাওয়া,
আমিও তাই তোদের ব্রত লব—
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া।

এ কী অদ্ভুত রকমের কথাবার্ত।! ইহার মধ্যে যে-একটি কথা আছে, অনেক দিনের সঞ্চিত নানা আবর্জনার যে তার চিত্তের উপরে জমিয়া তাহাকে সহজ আনন্দে যোগ দিতে দিতেছে না:

সেই বুক-ভাঙা বোঝা নেব না রে আর তুলিয়া
ভুলিবার যাহা একেবারে যাব ভুলিয়া—

সে কথাটা চাপাই পড়িয়া গেছে। এ রকম কৌতুকের আস্ফালনের ভিতর হইতে সেই অন্তরের কথাটুকু বাহির করা তাই শক্ত। গম্ভীর প্রকৃতির লোকদের বিশেষ দোষ দেওয়া যায় না।

৮৬