শরৎকালের নদীর বালুচরে চখাচখীর নির্জন ঘর, সন্ধ্যায় কুটিরদ্বারে ‘অতিথি’র রিনিঠিনি শিকল নাড়ার শব্দে বধূর ত্রস্তব্যস্ত ভাব, ‘মনের কথা-জাগানে’ বাতাসখানির স্পর্শ, দুপরে ‘ক্লান্ত-কাতর গ্রামে' ঝাউয়ের অবিরাম শব্দে— আকাশে অতিসুদূর বাঁশির তানে— কাতর একটি বিরহবেদনার ব্যাপ্ত বৈরাগ্য, ‘দুটি বোনে’র গুঞ্জনধ্বনি ও কলহাস্য, ‘মেঘলা দিনে ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ’, নববর্ষায় ‘শত বরনের ভাব-উচ্ছ্বাস কলাপের মতো করেছে বিকাশ’, নদীকূলে— কেতকীবনে— বকুলতলে— বর্ষাপ্রকৃতির কত বিচিত্র রূপ:
ওগো প্রাসাদের শিখরে আজিকে
কে দিয়েছে কেশ এলায়ে
কবরী এলায়ে?
ওগো নবঘন নীলবাসখানি
বুকের উপরে কে লয়েছে টানি,
তড়িৎশিখার চকিত আলোকে
ওগো কে ফিরিছে খেলায়ে?
এত বিচিত্র সৌন্দর্য, কোনো দেশের কোনো গীতিকবির হাতে কি এমন স্বচ্ছ এমন উজ্জ্বল প্রকাশে ধরা দিয়াছে! ‘ক্ষণিকা’র শেষের দিকে বিপুলবিরতিপূর্ণ এই একটি ব্যাপ্ত সৌন্দর্যের মধ্যে আমরা ক্রমেই নিবিড়তর গভীরতর লোকে প্রবেশ করি। প্রকৃতির ‘আবির্ভাব’ কল্পনার ‘বর্ষশেষে’র নূতনের আবির্ভাবেরই মতো:
উত্তাল তুমুল ছন্দে
নবঘনবিপুলমন্দ্রে
জলভরা বরষায় তাহার গান শেষ করিল!
৮৯