বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গভীরের সঙ্গে গভীরের মিলনের আরম্ভের এইখানেই সূত্রপাত। তাই ‘ক্ষণিকা’র শেষ কবিতা “সমাপ্তি”তে জিজ্ঞাসা হইতেছে:

চিহ্ন কি আছে শ্রান্ত নয়নে
অশ্রুজলের রেখা?
বিপুল পথের বিবিধ কাহিনী
আছে কি ললাটে লেখা?
রুধিয়া দিয়েছ তব বাতায়ন,
বিছানো রয়েছে শীতল শয়ন,
তোমার সন্ধ্যা-প্রদীপ-আলোকে
তুমি আর আমি একা।

 আমরা দেখিতেছি যে, ‘কল্পনা’তে ‘ক্ষণিকা’তে পূর্বজীবনের সৌন্দর্য ভোগের অবশেষকে যেন একেবারে ঝুলি ঝাড়িয়া নিঃশেষ করিয়া দেওয়া হইল। মাতৃগর্ভ হইতে ভূমিষ্ঠ হইবার সময় নাড়ী কাটার যে বেদনা শিশু পায়, পূর্বজীবনের সঙ্গে বিচ্ছেদের সেই প্রকারের বেদনা এই কাব্যগুলির মধ্যে রহিয়া গিয়াছে। ‘তপস্যা আমার স্বেচ্ছাকৃত নয়, সুখ আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়’— পূর্বে একটি পত্রাংশে এই কথাগুলি যে বলা হইয়াছিল, ‘কল্পনা’ ‘ক্ষণিকা’ই সেই কথার জাজ্বল্যমান প্রমাণ। ‘কল্পনা’র কারুখচিত প্রাচীনকালের সৌন্দর্যের সুনিপুণ রচনার নীচে এবং ‘ক্ষণিকা’র কৌতুকহাস্যোজ্জ্বল তরল সৌন্দর্যপ্রবাহের তলায়, যে পূর্বজীবনের, আর্টের জীবনের একটি সমাধি তৈরি হইয়াছে, সে খবর ঐ দুই কাব্যের ভিতর হইতে কে পড়িতে পারে? ঐ দুই কাব্যে বেদনার মেঘ অতি নিবিড় বলিয়াই অলংকারের রশ্মিচ্ছটা অমন আশ্চর্য ভাবে বিচ্ছুরিত হইবার সুযোগ পাইয়াছে।

৯১