আমরা কোথায় আছি—কোথায় সুদূরে
দীপহীন জীর্ণভিত্তি অবসাদপুরে
ভগ্ন গৃহে; সহস্রের ভ্রূকুটির নীচে
কুব্জপৃষ্ঠে নতশিরে; সহস্রের পিছে
চলিয়াছি প্রভুত্বের তর্জনী-সংকেতে
কটাক্ষে কাঁপিয়া; লইয়াছি শিরে পেতে
সহস্রশাসন-শাস্ত্র·····
‘নৈবেদ্যে’র সময় হইতে, অর্থাৎ ১৩০৮ সালে ‘বঙ্গদর্শনে’র সম্পাদকতার ভার গ্রহণের সময় হইতে, রবীন্দ্রনাথের স্বাদেশিক জীবনের আরম্ভ।
প্রসঙ্গতঃ একটা কথা এখানে বলা দরকার। আমরা ইতিপূর্বে দেখিয়া আসিয়াছি যে, প্রবল অনুভূতি এবং কল্পনার যোগে সমস্ত জিনিসকে দেখিবার দরুন যখনই কোনো খণ্ডতার মধ্যে কবি গিয়া পড়েন—হোক তাহা বাহ্য সৌন্দর্য, হোক মানবপ্রেম, হোক স্বদেশানুরাগ—তখন সেই খণ্ডতাকে খণ্ডতা বলিয়া জানিবার কোনো উপায় তাঁহার থাকে না। জীবনের অন্যান্য সকল দিককে আচ্ছন্ন করিয়া সে বড় হইয়া এবং একান্ত হইয়া উঠে। কিন্তু এইটি ঘটিবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়াও অমনিই শুরু হয়। খণ্ডতাকে বিদীর্ণ করিয়া আবার তাঁহার সর্বানুভূতি আপনাকে সমগ্রের মধ্যে নির্বোধ ও মুক্ত করিতে সক্ষম হয়।
স্বাদেশিক জীবনেও এই কাণ্ডটিই হইয়াছে। কেবল যে প্রাচীন ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক সাধনার আদর্শ তাঁহার নিজের জীবনের পূর্ণতার পক্ষে প্রয়োজন ছিল বলিয়া সেই আদর্শটুকুই তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহা নহে। স্বদেশ তাঁহার কল্পনানেত্রে তাহার অতীত ও বর্তমান, তাহার হীনতা ও বিকৃতি, তাহার আশা ও নৈরাশ্য, সমস্ত
৯৩