লইয়াই অখণ্ডরূপে দেখা দিয়াছিল। দেশের সেই অখণ্ড ভাবরূপ তাঁহার সমস্ত চিত্তকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করাতেই হিন্দুসমাজকেও সেই ভাবের দ্বারা সম্পূর্ণ করিয়া দেখিবার একটা উদ্যোগ তাঁহার মনের মধ্যে জাগ্রত হইয়া উঠিল।
আমি এই সময়ে কোনো কোনো বিশিষ্ট লোকের মুখে অনেকবার শুনিয়াছি যে, প্রাচীন ভারতবর্ষের প্রতি অন্ধভক্তিবশতঃ কবি বৈরাগ্য এবং সংসারবিমুখতার সাধনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা মনে করিয়া তাহারই একটি ক্ষেত্রের জন্য বোলপুরে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। অবশ্য এই সময়েই বোলপুর-আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়— ১৩০৮ সালের ৭ই পৌষে।
আমি কোনোমতেই স্বীকার করিতে চাহি না যে, আমাদের দেশের আধুনিক সন্ন্যাসের আদর্শ, কামিনীকাঞ্চনবর্জনের আদর্শ, কবিকে কোনো দিন কিছুমাত্র অধিকার করিয়াছিল। তার প্রমাণ ‘নৈবেদ্যে’ই আছে:
বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সে আমার নয়।
অসংখ্যবন্ধন মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ। এই বসুধার
মৃত্তিকার পাত্রখানি ভরি বারম্বার
তোমার অমৃত ঢালি দিবে অবিরত
নানাবর্ণগন্ধময়। প্রদীপের মতো
সমস্ত সংসার মোর লক্ষ বর্তিকায়
জ্বালায়ে তুলিবে আলো তোমারি শিখায়
তোমার মন্দিরমাঝে। ইন্দ্রিয়ের দ্বার
রুদ্ধ করি যোগাসন, সে নহে আমার!
যে কিছু আনন্দ আছে দৃশ্যে গন্ধে গানে
তোমার আনন্দ রবে তার মাঝখানে।
৯৪