মোহ মোর মুক্তিরূপে উঠিবে জ্বলিয়া,
প্রেম মোর ভক্তিরূপে রহিবে ফলিয়া।
আমি এই প্রবন্ধের আরম্ভে বলিয়াছি যে, কবির জীবনে আধ্যাত্মিকতার এই নুতন ভাবটি আকাশ হইতে হঠাৎ-পড়া কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়, তাহা তাঁহার কবি-জীবনেরই স্বাভাবিক পরিণতি— এবং আশা করি যে, যাহারা আমার এই সমগ্র প্রবন্ধটি অনুধাবন করিবেন তাঁহারা সেই পরিণতির ক্রমগুলিও একে একে চক্ষের সমক্ষে স্পষ্টরূপেই দেখিতে পাইবেন।
কবির পক্ষে প্রয়োজন ছিল বিচিত্রতার জীবনকে এবং আধ্যাত্মিক জীবনকে একসঙ্গে মেলানো— ভোগ এবং ত্যাগের সামঞ্জস্যের একটি সাধনার পথ আবিষ্কার করা।
আমি বলিয়া আসিয়াছি যে, একটা বড় মঙ্গলের ক্ষেত্র, ত্যাগের ক্ষেত্র, এই কারণে তাঁহার প্রয়োজন হইয়াছিল। দেশের কোথাও যখন এমন কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না, তখন তাঁহাকে নিজের চেষ্টায় এই বোলপুরে সেরূপ একটি ক্ষেত্র গড়িয়া লইতে হইল।
ভারতবর্ষের প্রাচীন চতুরাশ্রমধর্মের আদর্শ, তপোবনের আদর্শ— সংসার এবং পরমার্থ, ভোগ এবং ত্যাগ, এই পরস্পরবিপরীত জিনিসের সমন্বয় কী করিয়া সাধিত হইতে পারে তাহা নির্দেশ করিয়া দিয়াছে। আধুনিক কালের পক্ষে যে এই আদর্শের উপযোগিতা সকলের চেয়ে বেশি, সে কথা জগতে নানা জায়গাতেই আজ উঠিয়া পড়িয়াছে, ভারতবর্ষেও সে কথা প্রথম ধ্বনিত হইল কবিকণ্ঠে— এ এক আশ্চর্যের ব্যাপার।
ইউরোপে আজকাল কথা উঠিয়াছে— ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ভিত্তিস্বরূপ করিয়া যে সমাজরচনার চেষ্টা ফরাসীবিপ্লবের সময় হইতে চলিয়া
৯৫