আসিয়াছিল তাহা মিথ্যা, তাহা কখনোই ভিত্তি হইতে পারে না। সমাজকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির সমষ্টি বলিয়া জানা ভুল— সমাজ একটি অবিচ্ছিন্ন কলেবর, অঙ্গাঙ্গিভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিই তাহার ভিতরে সম্বন্ধ। সোস্যালিজম্ প্রভৃতির আন্দোলনের ধারা এই আদর্শের দিকেই প্রধাবিত। মিল, হর্বাট স্পেন্সর প্রভৃতি সমাজতত্ত্ববিদদের তাই আধুনিক ইউরোপ ব্যক্তিতন্ত্রের গোঁড়া বলিয়া গাল দিয়া থাকে।
কেবল বৈজ্ঞানিক ভাবে চুল-চেরা বিশ্লেষণ করিয়া জড়শক্তির মতো মনুষ্যসমাজের নানা বিচিত্র শক্তিগুলিকে সাজাইয়া তোলা যায় না— স্টেট গড়ার বৈজ্ঞানিক আদর্শও ইউরোপে ম্লান হইয়া আসিয়াছে। মানুষ তো কেবল প্রয়োজনসাধনের কল মাত্র নহে— সুতরাং ব্যবহারিক দিক দিয়া তাহার রাষ্ট্র রচনা করিতে গেলেই রাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থের মধ্যে যে প্রবল সংঘাত বাধিয়া যাইবে তাহার কোনো সমাধান খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। ধর্মের নূতন আন্দোলনের ভিতর দিয়া সেই কথাটা ইউরোপের চেতনার মধ্যে পৌঁছিয়াছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে সমাজের বেশ সহজ এবং অঙ্গাঙ্গী যোগ কী ভাবে সাধিত হইতে পারে ইউরোপের তাহাই এখন একটা বড় সমস্যা।
ইউরোপীয় দর্শন, সাহিত্য, আর্ট, সমাজনীতি, সমস্তের ভিতর দিয়াই এই সমন্বয়াদর্শ কাজ করিতেছে দেখিতে পাই।
কবি রবীন্দ্রনাথও ভারতবর্ষে এই আদর্শকেই তাহার প্রাচীন তপস্যার ভিতর হইতে নিজের জীবনের প্রয়োজনের ক্ষুধায় আবিষ্কার করিয়াছেন। ভারতবর্ষে ধর্ম এবং সমাজ, পরমার্থ এবং সংসার, আধুনিক কালে পরস্পরবিচ্ছিন্ন হইয়া ধর্মকে নিশ্চেষ্ট নিষ্ক্রিয় এবং সমাজকে আধ্যাত্মিকতাশূন্য আচারপরায়ণমাত্র করিয়া আমাদের দুর্বল করিয়া ফেলিয়াছে। সেইজন্য আমরা বলি যে, সংসার করিতে গেলে আচারের
৯৬