পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\. 3 ου , - রবীন্দ্র-রচনাবলী আর মহাকাব্যে পোষায় না। তখনকার উপযোগী মহাকাব্য লিখিয়া উঠাও এক জনের পক্ষে সম্ভবপর নহে। স্বতরাং তখন খণ্ডকাব্য ও গীতিকাব্য আবশ্বক হয় । গীতিকাব্য মহাকাব্যের পূৰ্ব্বেও ছিল কি না সে পরে আলোচিত হইবে। এক মহাকাব্যের মধ্যে সংক্ষেপে, অপরিস্ফুট ভাবে অনেক গীতিকাব্য, খণ্ডকাব্য থাকে, অনেক কবি সেইগুলিকে পরিস্ফুট করিয়াছেন। শকুন্তলা, উত্তর-রাম-চরিত প্রভৃতি তাহার উদাহরণস্থল। গীতিকাব্য, খণ্ডকাব্য যখন এত দূর বিস্তৃত হইয়া উঠে, যে, মহাকাব্যের অল্পায়তন স্থানে তাহারা ভাল ফুৰ্ত্তি পায় না, তখন তাহারা পৃথক হইয়া পড়ে। অতএব ইহাতে কবিতার অশুভ আশঙ্কা করিবার কিছুই নাই। প্রথমে সৌরজগৎ একটি বাষ্পচক্র ছিল মাত্র, পরে তাহা হইতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয়া গ্রহ উপগ্রহ সকল স্বজিত হইল। এখনকার মতন তখন বৈচিত্র্য ছিল না। আমাদের এই বিচিত্রতাময় খণ্ড ও গীতিকাব্য সমূহের বীজ মাত্র সেই সৌর মহাকাব্যের মধ্যে ছিল। কিন্তু তাহাই বলিয়া আমাদের মত বসন্ত বর্ষ ছিল না ; কানন, পৰ্ব্বত, সমুদ্র ছিল না ; পশু পক্ষী পতঙ্গ ছিল না ; সকলেরই মূল কারণ মাত্র ছিল। এখন বিচ্ছিন্ন হইয়া সৌরজগৎ পরিপূর্ণতর হইয়াছে। ইহার কোন অংশ সেই মহা সৌরচক্রের সমান নহে বলিয়া কেহ যেন না বলেন যে জগৎ ক্রমশই অসম্পূর্ণতর হইয়া আসিয়াছে। এখন সৌরজগতের মহত্ব অনুধাবন করিতে হইলে এই বিচ্ছিন্ন, অথচ আকর্ষণ-সূত্রে বদ্ধ মহারাজ্যতন্ত্রকে একত্র করিয়া দেখিতে হইবে ; তাহা হইলে আর কাহারো সন্দেহ থাকিবে না যে, এখনকার সৌরজগং পরিস্ফুটতর উন্নততর। জগতেরও উন্নতি-পৰ্য্যায়ের মধ্যে শ্রম-বিভাগ আছে। সৌরজগতের কাজ এত বাড়িয়া গিয়াছে যে, পৃথক পৃথক হইয়া কাজের ভাগ না করিলে কোন মতেই চলে না। যদি আধুনিক বিজ্ঞান-রাজ্যের সীমা ছাড়াইয়াও কিয়দুর যাওয়া যায়, যদি এই একত্র-সম্মিলিত বাষ্পরাশিগত অবস্থার পূর্বেও আর কোন অবস্থা থাকে এমন অনুমান করা যায়, তবে তাহা নানা স্বতন্ত্র আদিভূত সমূহের অফুট ভাবে পৃথক ভাবে বিশৃঙ্খল সঞ্চরণ, পরম্পর সংঘর্ষ । যাহাকে ইংরাজিতে chaos বলিয়া থাকে। প্রথমে বিশৃঙ্খল পার্থক্য, পরে একত্র সম্মিলন, ও তাহার পরে শৃঙ্খলাবদ্ধ বিচ্ছেদ । আমাদের বুদ্ধির রাজ্যেও এই নিয়ম। প্রথমে কতকগুলা বিশৃঙ্খল পৃথক সত্য, পরে তাহাদের এক শ্রেণী বদ্ধ করা, ও তৎপরে তাহাদের পরিস্ফুট বিভাগ। সমাজেও এই নিয়ম। প্রথমে বিশৃঙ্খল পৃথক পৃথক ব্যক্তি, পরে তাহাদের এক শাসনে দৃঢ়ৰূপে একত্রীকরণ, তাহার পরে প্রত্যেক ব্যক্তির অপেক্ষাকৃত ও যথোপযুক্ত পরিমাণে স্বশৃঙ্খল স্বাতন্ত্র্য, সুসংযত স্বাধীনতা ; কবিতাতেও এ নিয়ম খাটে। প্রথমে ছাড়া ছাড়া বিশৃঙ্খল অক্ষুট