পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমালোচনা Σ' ΣΣ মধ্যেই যে ব্যক্তি আতিথ্য পায়, ফুল বল, মেঘ বল, দুঃখী বল, স্বর্থী বল, সকলের প্রাণের মধ্যেই যাহার আসন আছে, সেই তাহা পারে। আর বড় বড় কথার মোটা মোটা ভাবের কবিতা লেখা সহজ, কারণ প্রাণের মধ্যে প্রবেশ না করিয়াও তাহ পারা যায়। বড় বড় কবির কবিতা অনেকের পক্ষে কুহেলিকাময়ী কেন ? কারণ, তাহারা যাহা অনুভব করিয়াছেন, অধিক বকিয় যে তাহা সহজ করিতে হইবে, ইহা তাহাদের মনেও হয় না ; এবং তাহারা যাহা অনুভব করিয়াছেন, তাহা সকলে অনুভব করে নাই ; কাজেই সকলের কাছে তাহাদের সে সহজ কথা নিতান্ত শক্ত হইয়া পড়ে। সহজ কথা লিথিয়াছেন বলিয়াই শক্ত । সহজ কথার গুণ এই যে, তাহা যতটুকু বলে, তাহা অপেক্ষ অনেক অধিক বলে । সে সমস্তটা বলে না । পাঠকদিগকে কবি হইবার পথ দেখাইয়া দেয়, যেদিকে কল্পনা ছুটাইতে হইবে, সেই দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করিয়া দেয় মাত্র, আর অধিক কিছু করে না । নিজে যাহা আবিষ্কার করিয়াছে, পাঠকদিগকেও তাহাই আবিষ্কার করাইয়া দেয়। যাহাদের কল্পনা কম, যাহাদের চোখে আঙুল দিয়া দেখাইতে হয়, তাহারা এরূপ কবিতার পাঠক নহে । আমাদের চণ্ডিদাস সহজ ভাষার সহজ ভাবের কবি, এই গুণে তিনি বঙ্গীয় প্রাচীন কবিদের মধ্যে প্রধান কবি । তিনি যে সকল কবিতা লেখেন নাই, তাহারই জন্য কবি । তিনি এক ছত্র লেখেন ও দশ ছত্র পাঠকদের দিয়া লিখাইয়া লন । দুই একটি সামান্য দৃষ্টান্ত দিলেই আমাদের কথা পরিস্ফুট হইবে। “এ ঘোর রজনী, মেঘের ঘটা, কেমনে আইল বাটে ? আঙ্গিনার কোণে তিতিছে বঁধুয়া, দেখিয়া পরাণ ফাটে । সই কি আর বলিব তোরে, বহু পুণ্য ফলে সে হেন বঁধুয়া, আসিয়| মিলল মোরে । ঘরে গুরুজন ননদী দারুণ, বিলঙ্গে বাহির হৈতু, আহা মরি মরি, সঙ্কেত করিয়া কত না যাতনা দিতু । বধুর পিরীতি আরতি দেখিয়া মোর মনে হেন করে,