পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শোনে, তুমি মাথা নাড়িতে চাহিলে, তোমার দুই পায়ের দুই বুড় আঙ্গুল নড়িয়া উঠিল, এক করিতে আর হয় । </ আমাদের দেশে ইংরাজি শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের মধ্যে বিজাতীয় প্রভেদ দাড়াইয়াছে । সুতরাং স্ত্রী পুরুষের মধ্যে, উচ্চ নীচের মধ্যে, প্রাচীন নবীনের মধ্যে অর্থাং বাপে বেটায় এক প্রকার জাতিভেদ হইয়াছে ! যেখানে জাতিভেদ আছে অথচ নাই, সেখানে কোন কিছুর হিসাব ঠিক থাকে না । দুই বৃক্ষ দুই দিকে যদি মুখ করিয়া থাকে তাহাতে উদ্ভিদরাজ্যের কোন ক্ষতি হয় না—কিন্তু যেখানে ডালের সঙ্গে গুড়ির, আগার সঙ্গে গোড়ার মিল হয় না সেখানে ফুলের প্রত্যাশা করিতে গেলে আকাশ-কুসুম পাওয়া যায় এবং ফলের প্রত্যাশা করিতে গেলে কদলীও মিলে না । আমাদের সমাজ যদি গাছপাকা হইয়া উঠিত তবে আর ভাবনা থাকিত না, তাহ হইলে আঁঠিতে খোসাতে এত মনান্তর, মতান্তর, অবস্থাস্তর থাকিত না । কিন্তু হিন্দুসমাজের শাখা হইতে পাড়িয়া বঙ্গসমাজকে বলপূর্বক পাকান হইতেছে। ইহার একটা আশু উপকার এই দেখা যায় অতি শীঘ্রই পাক ধরে, গাছে পাচ দিনে যাহা হয় এই উপায়ে এক দিনেই তাহ হয় । বঙ্গসমাজেও তাহাই হইতেছে । বঙ্গসমাজের যে অংশে ইংরাজি সভ্যতার তাত লাগিতেছে সেখানটা দেখিতে দেথিতে লাল হইয়া উঠিতেছে, কিন্তু খামল অংশটুকুর সঙ্গে তাহার কিছুতেই বনিতেছে না। এরূপ ফলের মধ্যে সহজ নিয়ম আর খাটে না । \ পুরুষদের মধ্যে ইংরাজি শিক্ষা ব্যাপ্ত হইয়াছে, স্ত্রীলোকদের মধ্যে হয় নাই। শিক্ষার প্রভাবে পুরুষেরা স্থির করিয়াছেন বাল্য-বিবাহ দেশের পক্ষে অমঙ্গলজনক—ইহাতে সস্তান দুৰ্ব্বল হয়, অল্প বয়সে বহু পরিবারের ভারে সংসার-সাগরের অশ্রীপূর্ণ লোনাজলে হাবুডুবু খাইতে হয় ইত্যাদি । এই শিক্ষার গুণে র্তাহারা আত্মসংযমপূৰ্ব্বক নিজের ও দেশের দূর মঙ্গল অমঙ্গলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া অধিক বয়সে বিবাহ করিবার পক্ষে উপযোগী হন । কিন্তু স্ত্রীলোকেরা এরূপ শিক্ষা পান নাই এবং অধিক বয়সে বিবাহ করিবার জন্য প্রস্তুতও হন নাই। র্তাহারা অন্তঃপুরের পুরাতন প্রথার মধ্যে, ঠাট্টার সম্পৰ্কীয়দের চিরন্তন উপহাস বিদ্রুপের মধ্যে, বিবাহ প্রভৃতি গৃহকর্মের নানাবিধ আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানের মধ্যে আশৈশব লালিত পালিত হইয়াছেন । আপিসের অল্পের স্থায় প্রত্যুষেই তাহাদিগকে খরতাপে চড়ান হইয়াছে, এবং ক্রমাগত গরম মসলা পড়িতেছে—চেষ্টা হইতেছে যাহাতে দশ, বড় জোর সাড়ে দশের আগেই রীতিমত ‘ক’নে পাকাইয়া তাহাদিগকে ভদ্রলোকের পাতে দেওয়া যাইতে পারে। স্বতরাং