পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S3 o রবীন্দ্র-রচনাবলী স্ত্রীলোকদের বাল্যবিবাহ আবশ্বক। কিন্তু পুরুষেরা অধিক বয়সে বিৰাহ করিতে কতসঙ্কল্প হইলে মেয়েদের বর শীঘ্ৰ জুটিবে না—তাহাদিগকে দায়ে পড়িয়া জপেক্ষ কৰিতে হইবে। তাহা ছাড়া অধিকবয়স্ক পুরুষেরা নিতান্ত অল্পবয়স্ক কন্যাকে বিবাহ করিতে সন্মতও হইবেন না। অথচ বহু দিন অপেক্ষা করিবার মত অবস্থা ও শিক্ষা নহে— বিশেষতঃ প্রাচীনারা কন্যার বিবাহে বিলম্ব দেখিয়া বিবাহের আবশ্বকতা সম্বন্ধে রীতিমত আন্দোলন করিয়া বেড়াইতেছেন। অনেকে বলিবেন, স্ত্রীশিক্ষাও ত প্রচলিত হইয়াছে। কিন্তু সে কি আর শিক্ষা ? গোটা দুই ইংরাজি প্রাইমার গিলিয়া, এমন কি এন্টেন্সের পড়া পড়িয়াও কি কঠোর কর্তব্যাকৰ্ত্তব্য নির্ণয়ের শক্তি জন্মে ? শত শত বৎসরের পুরুষাহক্রমবাহী সংস্কারের উপরে মাথা তুলিয়া উঠা অল্প শিক্ষা ও অল্প বলের কাজ নহে। রীতিমত স্ত্রীশিক্ষা প্রচলিত হওয়া ও অন্তঃপুরের চিরন্তন আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়া এখন অনেক দিনের কথা । অথচ বাল্যবিবাহের প্রতি বিদ্বেষ আজই জাগিয়া উঠিয়াছে। এখন কি করা যায় ! একান্নবৰ্ত্তী পরিবারের মধ্যে বাস করিতেছি, অথচ বাল্যবিবাহ উঠাইতে চাই । একান্নবৰ্ত্তী পরিবারের মধ্যে অধিকবয়স্ক নূতন লোক প্রবেশ করিতে পারে না । চরিত্রগঠনের পূর্বেই উক্ত পরিবারের সহিত লিপ্ত হওয়া চাই, নতুবা সেই নূতন লোক আচৰ্বিবত কঠিন খাদ্যের ন্যায় পরিবারের পাকস্থলীতে প্রবেশ করিয়া বিষম বিশৃঙ্খলা উপস্থিত করে । এই যেমন একটা উদাহরণ দেওয়া গেল, তেমনি আরেক শ্রেণীর আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ইংরাজি শিক্ষা সত্ত্বেও কেহ কেহ এমন বিবেচনা করেন যে, বিধবা-বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত নহে । বিধবাদের পক্ষে ব্রহ্মচৰ্য্য অবলম্বন করিয়া থাকার অপেক্ষা মহত্ব আর কি হইতে পারে ? ইহাতে পরিবারের মধ্যে একটি পবিত্র আদর্শের প্রতিষ্ঠা করা হয় । যখন আজন্মকালের শিক্ষা ও উদাহরণের প্রভাবে বঙ্গনারী স্বামীকে দেবতা জ্ঞান করিত—স্বামীকেই স্ত্রীলোকের চরম গতি, পরম মুক্তির কারণ বলিয়া জানিত, তখন বিধবাদের ব্রহ্মচৰ্য্য পালন করা স্বাভাবিক ছিল, এবং না করা দূৰ্য ছিল। কিন্তু সে শিক্ষা, সে উদাহরণ, সে ভাব চলিয়া যাইতেছে, তবে ব্রহ্মচৰ্য্য ব্ৰত কিসের বলে দাড়াইবে । তাহা ছাড়া কেবল একটা বাহ অনুষ্ঠান পালন করার কোন ফল নাই, তাহার আভ্যস্তরিক ভাবেই তাহার মহত্ব। এক কালে আমাদের সমাজ ভক্তি ও স্নেহের সূত্রেই গাথা ছিল । তখন পুত্র পিতাকে, শিন্য গুরুকে, ছোট ভাই বড় ভাইকে, সমস্ত স্নেহাম্পদের সমস্ত গুরুজনদের অসীম ভক্তি করিত । সমাজের সে