পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন্ত্রি অভিষেক tఫి ইহারা বলেন ইংরাজ কি তেমনি পাত্ৰ ! এত কাল যাহার তোমাদিগকে কথায় ভুলাইয়া আসিয়াছে তাহারা কি আজ তোমাদের কথায় ভুলিবে! তোমরা এ বিষ্ঠা কত দিনই বা শিখিয়াছ ! উহাদের কথার সহিত কাজের মিল করাইৰার জন্য দাবী করিয়া বসিলে লাভে হইতে ফল হইবে এই যে, মিষ্ট কথাটুকু হইতেও বঞ্চিত হইবে। তাহার প্রমাণ হাতে হাতে দেখ । যে অবধি তোমরা উক্ত দেশহিতকর কাৰ্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছ সেই অবধি পায়োনিয়রপ্রমুখ দেশের ইংরাজি কাগজ খৃষ্টান-জনোচিত ভাব সম্পূর্ণ পরিহার করিয়াছে। স্বয়ং বড়কৰ্ত্ত সালিসবারি আর থাকিতে পারিলেন না, প্রকাশ্যে তোমাদের কালামুখের উপর মুখনাড়া দিলেন । মিষ্টবাক্য মধুর আশ্বাস এ সকল সভ্যতার ভূষণ—এগুলোকে তোমরা এত বেশি খাটি বলিয়া ধরিয়া লইতেছ যে দায়ে ফেলিয়া অবশেষে ইংরাজের মধুর সভ্যতা এবং শোভন ভদ্রতাটুকুও তাড়াইবে । একদিন দেখিবে মিষ্টান্নও নাই মিষ্ট বচনও নাই । দেখ না কেন কর্তৃজাতীয়দের কেহ কেহ এত দূর পর্য্যন্ত স্পষ্টবক্ত হইয়াছেন যে এই উনবিংশ খৃষ্টশতাব্দীর অপরাষ্ট্র ভাগে তাহারা অসঙ্কোচে এমন কথা বলিতেছেন যে “তরবারি দ্বারা আমরা জয় করিয়াছি, তরবারি দ্বারা আমরা রক্ষা করিব।” অর্থাৎ মানবপ্রেম নিঃস্বার্থ উপচিকীর্ষ এ সকল ধৰ্ম্মবচন কেবল নিজের উপরেই প্রয়োগ করা যাইতে পারে, তরবারিলব্ধ ভারতবর্ষের প্রতি এ সকল খৃষ্টীয় বিধান খাটে না । দেখ একবার কি কাগুটা করিয়াছ ! স্বয়ং উনবিংশ শতাব্দীর বোল ফিরাইয়া দিয়াছ ! তবে আর তাহার অবশিষ্ট কি রাখিলে! তাহার তরবারি এবং জিহবা দুটোই সমান প্রখর হইয়া উঠিল, ধৰ্ম্মনীতি কোথাও স্থান পাইল না । কিন্তু কনগ্রেসের ভিত্তি ইংরাজবিশ্বাসের উপর স্থাপিত। কনগ্রেস বলে, অবশ্ব মনুষ্যচরিত্র একেবারে দেবতুল্য নহে। ক্ষমতালালসা, প্রভূত্বপ্রিয়তা, স্বার্থপরতা ইংরাজের হৃদয়েও আছে কিন্তু তাহা ছাড়া আরো এমন কিছু আছে যাহাতে করিয়া ইংরাজের প্রতি আমাদের বিশ্বাস হ্রাস হয় না। প্রতিদিন গালি খাইতেছি, লাঞ্ছনা ভোগ করিতেছি তবুও কোথা হইতে অস্তরের মধ্যে অভয় প্রাপ্ত হইতেছি । ইংরাজি সংবাদপত্রের সম্পাদকমণ্ডলী “ষড়যন্ত্রকারী বাবু সম্প্রদায়,” “মুখসৰ্ব্বস্ব বাক্যবীর” ইত্যাদি বিশেষণের মধ্যে আপন গাত্রজালা নিহিত করিয়া চতুর্দিক হইতে সশব্দে আমাদের প্রতি নিক্ষেপ করিতেছেন। আমরা হাসিয়া বলিতেছি, কথা তোমরাও কিছু কম বল না ! তোমরা যদি আরম্ভ কর ত আমরা কি তোমাদের সঙ্গে কথায় অঁাটিয়া উঠিতে পারি ! তোমাদের কাছেই আমাদের শিক্ষা । কথার বায়ব-শক্তিতেই ত তোমাদের এত বড় রাজনৈতিক যন্ত্রটা চলিতেছে । কথা-ভরা ভরা ২২