পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রহ্ম মন্ত্র । గిసి) বলিয়াই সেই সংসারাতীত নিৰ্ব্বিকার অক্ষর পুরুষের আদর্শ উজ্জল করিয়া রাখিতে হইবে—সে আদর্শ বিকৃত হইতে দিলেই তাহা সছিদ্র তরণীর ন্যায় আমাদিগকে বিনাশ হইতে উত্তীর্ণ হইতে দেয় না। যদি সত্যকে, জ্যোতিকে, অমৃতকে আমরা অসৎ, অন্ধকার এবং মৃত্যুর পরিমাপে থৰ্ব্ব করিয়া আনি, তবে কাহাকে ভাকিয়া কহিব আসতো মা সদগময়, তমসে মা জ্যোতিৰ্গময়, মৃত্যুোৰ্মামৃতং গময়। সংসারী জীবের পক্ষে একটি মাত্র প্রার্থনা আছে—সে প্রার্থনা, অসৎ হইতে আমাকে সত্যে লইয়া যাও, অন্ধকার হইতে আমাকে জ্যোতিতে লইয়া যাও, মৃত্যু হইতে আমাকে অমৃতে লইয়া যাও—সে প্রার্থনা করিবার স্থান সংসারে নাই, আমাদের কল্পনার মধ্যে নাই,—সত্যকে মিথ্যা করিয়া লইয়া তাহার নিকট সত্যের জন্ত ব্যাকুলতা প্রকাশ চলে না, জ্যোতিকে স্বেচ্ছাকৃত কল্পনার দ্বারা অন্ধকারে আচ্ছন্ন করিয়া তাহার নিকট আলোকের জন্য প্রার্থনা বিড়ম্বন মাত্র, অমৃতকে স্বহস্তে মৃত্যুধর্মের দ্বারা বিকৃত করিয়া তাহার নিকট অমৃতের প্রত্যাশা মূঢ়তা। ঈশাবাস্তমিদং সৰ্ব্বং যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ—যে ব্রহ্ম সমস্ত জগতের সমস্ত পদার্থকে আচ্ছন্ন করিয়া বিরাজ করিতেছেন সংসারী সেই ব্রহ্মকেই সৰ্ব্বত্র অনুভব করিবেন উপনিষদের এই অমুশাসন । ব্রহ্মের সেই বিশুদ্ধ ভাব কিরূপে মনন করিতে হইবে ? নৈনমূৰ্দ্ধং ন তিৰ্য্যঞ্চ ন মধ্যে পরিজগ্রভৎ ন তস্ত প্রতিমা অস্তি যস্ত নাম মহদ্যশ: | কি উৰ্দ্ধদেশ, কি তিৰ্য্যক, কি মধ্যদেশ কেহ ইহাকে গ্রহণ করিতে পারে ন!—তাহার প্রতিমা নাই, তাহার নাম মহদ্যশ । প্রাচীন ভারতে সংসারবাসী জীবাত্মার লক্ষ্যস্থান এই পরমাত্মাকে বিদ্ধ করিবার মন্ত্র ছিল ওঁ । ةss প্ৰণবো ধমু: শরে হাত্মা ব্রহ্ম তল্লক্ষ্যমুচ্যতে । র্তাহার প্রতিমা ছিল না, কোন মূর্তিকল্পনা ছিল না—পূৰ্ব্বতন পিতামহগণ র্তাহাকে মনন করিবার জন্য সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া একটিমাত্র শব্দ আশ্রয় করিয়াছিলেন । সে শব্দ যেমন সংক্ষিপ্ত, তেমনি পরিপূর্ণ, কোন বিশেষ অর্থ দ্বারা সীমাবদ্ধ নহে। সেই শব্দ চিত্তকে ব্যাপ্ত করিয়া দেয়, কোন বিশেষ আকার দ্বারা বাধা দেয় না ; সেই একটি মাত্র ওঁ শব্দের মহাসঙ্গীত জগৎসংসারের ব্রহ্মরন্ধ হইতে যেন ধ্বনিত হইয়া উঠিতে থাকে । ব্রহ্মের বিশুদ্ধ আদর্শ রক্ষা করিবার জন্য পিতামহগণ কিরূপ যত্নবান ছিলেন ইহা হইতেই তাহার প্রমাণ হইবে । ।