পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র স্পর্শ, আমাদের দেহের প্রত্যেক স্পন্দিত কোষ, প্রত্যেক নিঃশ্বসিত রোমকূপের মধ্যে পাই না ; আকৃতির কঠিন ব্যবধানে, মূৰ্ত্তির অলঙ্ঘনীয় অন্তরালে তিনি আমাদের নিকট হইতে আমাদের অস্তর হইতে দূরে বাহিরে গিয়া পড়েন। আমার অশরীরী অভাবনীয় প্রাণ আমার আদ্যোপান্তে অখণ্ডভাবে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছে, আমার পদাঙ্গুলির কোষাণুর সহিত আমার মস্তিষ্কের কোষাণুকে যোগযুক্ত করিয়া রাখিয়াছে,— আবার আমার এই রহস্যময় প্রাণের মধ্যে সেই পরমপ্রাণ আমার শরীরকোষের প্রত্যেক স্পন্দনের সহিত স্থদূরতম নক্ষত্রবর্তী বাষ্পাণুর প্রত্যেক আন্দোলনকে এক অনিৰ্ব্বচনীয় ঐক্যে এক অপূৰ্ব্ব অপরিমেয় ছন্দোবন্ধনে আবদ্ধ করিয়াছেন, ইহা অনুভব করিয়া এবং অঙ্কুভবের শেষ করিতে না পারিয়া কি আমাদের চিত্ত পুলকিত প্রসারিত হইয়া উঠে না ? কোনও মূৰ্ত্তির কল্পনা কি ইহা অপেক্ষা সহজে আমাদিগকে সৰ্ব্বপ্রকার ক্ষুদ্রতার বন্ধন, খণ্ডতার কারাপ্রাচীর হইতে মুক্তিদানে সহায়তা করিতে পারে, অনস্তের সহিত আমাদের এমন অস্তরতম ব্যাপকতম যোগ সংনিবন্ধ করিতে পারে ? সাকার মূৰ্ত্তি আমাদিগকে সহায়তা করে না, ব্রহ্মকে দূরে লইয়া দুষ্প্রাপ্য করিয়া দেয়। যদা হেবৈষ এতস্মিন অদৃশ্বেহনাত্ম্যেহনিরুক্তেহনিলয়নে অভয়ং প্রতিষ্ঠাং বিন্দতে অথ সোহভয়ংগতো ভবতি— যখন সাধক সেই অদৃষ্ঠে, অশরীরে, নির্বিশেষে, নিরাধারে অভয় প্রতিষ্ঠা লাভ করেন তখন তিনি অভয় প্রাপ্ত হন । যদা হেবৈষ এতস্মিয়, দরমস্তরং কুরুতে অথ তন্ত ভয়ং ভবতি— কিন্তু যখন তিনি ইহাতে লেশমাত্র অন্তর অর্থাৎ দূরত্ব স্থাপন করেন তখন তিনি ভয় প্রাপ্ত হন। সেই অদৃশুকে দৃত, অশরীরকে শরীরী, নির্বিশেষকে সবিশেষ এবং নিরাধারকে আধার-বিশিষ্ট করিলে ব্রহ্মের সহিত দূরত্ব স্থাপন করা হয় এবং তখন আমাদের আত্মার অভয় প্রতিষ্ঠা চূর্ণ হইয়া যায়। উপনিষৎ বলিতেছেন— h অস্তীতি ব্রুবতোহন্যত্র কথং তদুপলভ্যতে | তিনি আছেন এই কথা যে বলে সে ছাড়া অন্য ব্যক্তি র্তাহাকে কি করিয়া উপলব্ধি করিবে ? তিনি আছেন ইহার অধিক আর কি বলিবার আছে ? তিনি আছেন এ কথা যখনি আমরা সৰ্ব্বাস্তঃকরণে সম্পূর্ণভাবে বলিতে পারি তখনই আমাদের মনোনেত্রের সম্মুখে অনন্ত শূন্ত ওতপ্রোত পরিপূর্ণ হইয়া উঠে—তখনি যথার্থত বুঝিতে পারি যে, আমি আছি, বুঝিতে পারি যে, আমার বিনাশ নাই, আত্ম ও পর, জড় ও চেতন, দেশ ও কাল নিষ্কল পরমাত্মার দ্বারা এক মুহূৰ্ত্তেই অখণ্ডভাবে উদ্দীপ্ত হইয়া