পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচন৷ So আর একদল নূতন জীবের নিকটে তাহা কেবল শব্দরূপে প্রতীত হইতেছে। আমাদের কাছে বস্তু দেখা ও তাহাদের কাছে শব্দ শোনা একই। এমনও আশ্চৰ্য্য নহে, আর এক নূতন জীব দৃষ্টি শ্রুতি ভ্ৰাণ স্বাদ স্পর্শ ব্যতীত আর এক নূতন ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারা বস্তুকে অনুভব করে তাহা অামাদের কল্পনার অতীত । বস্তুকে ক্রমাগত বিশ্লেষ করিতে গেলে তাহাকে ক্রমাগত সূক্ষ্ম হইতে সুক্ষ্মে পরিণত করা যায়—অবশেষে এমন হইয়া দাড়ায় আমাদের ভাষায় যাহার নাম নাই, আমাদের মনে যাহার ভাব নাই। মুখে বলি তাহা অসংখ্য শক্তির খেলা, কিন্তু শক্তি বলিতে আমরা কিছুই বুঝি না। অতএব আমরা যাহা দেখিতেছি শুনিতেছি, তাহার উপরে অনন্ত বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারি না । কাজের সুবিধার জন্য রফা করিয়া কিছু দিনের মত তাহাকে এই আকারে বিশ্বাস করিবার একটা বন্দোবস্ত হইয়াছে মাত্র ; আবার অবস্থা পরিবর্তনে এ চুক্তি ভাঙ্গিলে তাহার জন্য আমরা কিছুমাত্র দায়িক হইব না। তুলনায় অরুচি। এইখানে প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা বলিবার ইচ্ছা হইতেছে, এই বেলা সেই কথাটা বলিয়া লই, পুনশ্চ পূৰ্ব্বকথা উত্থাপন করা যাইবে । অনেক লোক আছেন তাহার কথাবাৰ্ত্তাতেই কি, আর কবিতাতেই কি, তুলনা বর্দাস্ত করিতে পারেন না। তুলনাকে তাহারা নিতান্ত একটা ঘরগড় মিথ্যারূপে দেখেন ; নিতান্ত অনুগ্রহপূর্বক ওটাকে তাহারা মানিয়া লন মাত্র। র্তাহারা বলেন, যেটা যাহা সেটাকে তাহাই বল, সেটাকে আবার আর-একটা বলিলে তাহাকে একটা অলঙ্কার বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি, কিন্তু তাহাকে সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে পারি না । ইহার কঠিন নৈয়ায়িক লোক, ন্যায়শাস্ত্র অনুসারে সকল কথা বাজাইয়া লন, কবিতার তুলনা উপমা প্রভৃতি ন্যায়শাস্ত্রের নিকট যাচাই করিয়া তবে গ্রহণ করেন। অতএব ইহাদের কাছে শাস্ত্র অনুসারেই কথা কহা যাক। জগৎসংসারে কোন জিনিষটা একেবারে স্বতন্ত্র, কোন জিনিষটা এতবড় প্রতাপান্বিত যে কোন-কিছুর সহিত কোন সম্পর্ক রাখে না ? জড়বুদ্ধির সকল জিনিষকেই পৃথক করিয়া দেখে, তাহাদের কাছে সবই স্বস্বপ্রধান । বুদ্ধির যতই উন্নতি হয় ততই সে ঐক্য দেখিতে পায়। বিজ্ঞান বল, দর্শন বল, ক্রমাগত একের প্রতি ধাবমান হইতেছে । সহজচক্ষে যাহাদের মধ্যে আকাশ পাতাল, তাহারাও অভেদাত্মা হইয়া দাড়াইতেছে । এ বিশ্বরাজ্যে বিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক ঐক্য, দশন দার্শনিক ঐক্য দেখাইতেছে, কবিতা কি অপরাধ করিল ? তাহার কাজ জগতের