পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা 86t তাহারা ঐহিক অতিক্রম করিয়া আর কিছুই দেখিতে পায় না, আর কিছুর উপরেই বিশ্বাস স্থাপন করে না । কেনই বা করিবে ? তাহারা দেখিতেছে, এইখানেই সমস্ত হিসাব মিলিয়া যায়, অন্যত্র অনুসন্ধানের আবশ্বকই করে না। কিন্তু আমরতা কখন দেখিতে পাই ? পৃথিবীর মাটি হইতে উদ্ভূত হইয়া পৃথিবীতেই মিলাইয়া যাইব, এ সন্দেহ কখন দূর হয় ? যখন দেখিতে পাই, আমাদের মধ্যে এমন একটি পদার্থ আছে, যে ঐহিকের সকল নিয়ম মানে না। আমরা আপনার মুখ চাই না, আমরা আনন্দের সহিত আত্মবিসর্জন করিতে পারি, আমরা পরের মুখের জন্য নিজেকে দুঃখ দিতে কাতর হই না। কোথাও ইহার “কেন” খুজিয়া পাই না । কেবল হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে পারি যে, নিজের ক্ষুধায় কাতর, সংগ্রাম-পরায়ণ এই জগৎ অতিক্রম করিয়া আর এক জগৎ আছে, ইহা সেইখানকার নিয়ম । সুতরাং এইখানেই পরিণাম দেখিতেছি না। চারিদিকে এই যে বস্তু-জগতের ঘোর কারাগার-ভিত্তি উঠিয়াছে, ইহাই আমাদের অনন্ত কবর-ভূমি নহে। অতএব যখনি আমরা আত্ম-বিসর্জন করিতে শিথিলাম, তখনি আমাদের গুরুভার ঐহিক দেহের উপরে দুটি পাখা উঠিল । পৃথিবীর মাটিতে চলিবার সময় সে পাখা দুটির কোন অর্থ বুঝা গেল না। কিন্তু ইহা বুঝা গেল যে ঐ পাখা দুটি কেবল মাত্র তাহার শোভা নহে, উহার কার্য্য আছে। তবে যাহাদের এই পাখা জন্মায় নাই, তাহদেরও কি আকাশে উঠিবার অধিকার আছে ? স্থায়িত্ব। আমাদের মধ্যে যে সকল উচ্চ আশা, যে সকল মহত্ত্ব বিরাজ করিতেছে তাহারাই স্থায়ী, আর যাহারা তাহাদিগকে বাধা দিয়াছে, তাহাদিগকে কাৰ্য্যে পরিণত হইতে দেয় নাই, তাহার নশ্বর । তাহারা এইখানকারই জিনিষ, তাহারা কিছু সঙ্গে সঙ্গে যাইবে না । আমার মধ্যে যে সকল নিত্য পদার্থ বিরাজ করিতেছে, তাহা তোমরা দেখিতে পাইতেছ না ; তাহাদের চারিদিকে যে জড়স্তপ উখিত হইয়া কিছু দিনের মত তাহাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে, তাহাই তোমরা দেখিতেছ। আমার মনের মধ্যে যে ধৰ্ম্মের আদর্শ বর্তমান রহিয়াছে তাহারই উপর আমার স্থায়িত্ব নির্ভর করিতেছে। যখন কাষ্ঠলোষ্ট্রের মত সমস্ত পড়িয়া থাকে তখন ধৰ্ম্মই আমাদের অনুগমন করে। যাহার আত্মায় এ আদর্শ নাই, দেহের সহিত তাহার সম্পূর্ণ মৃত্যু হয়। জড়ত্বই তাহার পরিণাম । যে গেছে, সে তাহার জীবনের সার পদার্থ লইয়া গেছে, তাহার যা যথার্থ জীবন তাহাই লইয়া গেছে, আর তাহার দু-দিনের মুখ দুঃখ, দু-দিনের কাজকৰ্ম্ম