পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহজ পাঠ \وك e ۹ দু-জনে চড়ে বসলেন। গাছের গুড়ির সঙ্গে চাদর দিয়ে নিজেদের বাধলেন। পাছে ঘুম এলে পড়ে যান। কোথাও আলো নেই। তারা দেখা যায় না। কেবল অসংখ্য জোনাকি গাছে গাছে জলছে । শক্তিবাবুর একটু নিদ্রা এসেছে এমন সময় হঠাৎ ধুপ্ ক’রে একটা শব্দ হওয়াতে চমকে জেগে উঠলেন। দেখলেন কখন বাধন আলগা হয়ে আক্রম নিচে প’ড়ে গেছে । শক্তিনাথ তাকে দেখতে তাড়াতাড়ি নেমে এলেন । হঠাৎ দেখেন, কাছেই অন্ধকারে দুটো চোখ জলজল করছে। কী সর্বনাশ । এ তো বাঘের চোখ । বন্দুক তোলবার সময় নেই। ভাগ্যে দু-জনের কাছে দুটো বিজলি বাতির মশাল ছিল । সে-দুটো যেমনি হঠাৎ জালানো অমনি বাঘ ভয়ে দৌড় দিলে । সে-রাত্রি আবার দু-জনের গাছে কাটল । পরের দিন সকাল হোলো। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা মেলে না, যতই চলেন, জঙ্গল বেড়ে যায়। গায়ে কাটার আঁচড় লাগে । রক্ত পড়ে। খিদে পেয়েছে । তেষ্টা পেয়েছে। এমন সময় মানুষের গলার শব্দ শোনা গেল। এক দল কাঠুরিয়া কাঠ কাটতে চলেছে। শক্তিবাবু বললেন—তোমাদের ঘরে নিয়ে চলো। রাস্তা ভুলেছি। কিছু খেতে দাও । নদীর ধারে একটা ঢিবির পরে তাদের কুঁড়ে ঘর। গোলপাত দিয়ে ছাওয়া । কাছে একটা মস্ত বটগাছ। তার ডাল থেকে লম্বা ঝুরি নেমেছে। সেই গাছে যত রাজ্যের পাখির বাসা । কাঠুরিয়া শক্তিবাবুকে আক্রমকে যত্ন ক’রে খেতে দিলে। তালপাতার ঠোঙায় এনে দিলে চি ড়ে আর বনের মধু। আর দিলে ছাগলের দুধ । নদী থেকে ভাড়ে ক’রে এনে দিলে জল। রাত্রে ভালো ঘুম হয়নি। শরীর ছিল ক্লান্ত । শক্তিবাবু বটের ছায়ায় শুয়ে ঘুমলেন। বেলা যখন চার প্রহর তখন কাঠুরিয়াদের সর্দার পথ দেখিয়ে নৌকোয় তাদের পৌছে দিলে। শক্তিবাবু দশ টাকার নোট বের করে বললেন, বড়ো উপকার করেছ, বকশিশ লও। সর্দার হাতজোড় ক’রে বললে, মাপ করবেন, টাকা নিতে পারব না—নিলে অধৰ্ম হবে । এই ব’লে নমস্কার ক’রে সর্দার চ’লে গেল । একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিলু “চেয়ে দেখো”, “চেয়ে দেখো” বলে যেন বিহু চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বরগা কড়িতে, কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে ।