Q ঘরে-বাইরে 8సి এমনি করে উনি যখন বাড়ির মেয়েদের সব রকম ক্ষুদ্রতাই উড়িয়ে দিতেন আমার রাগ হত। সমাজ কী হলে কী হতে পারত সে-সব কথা কয়ে তো কোনো লাভ নেই, কিন্তু পথে ঘাটে চারদিকে এই যে কাটা গজিয়ে রইল, এই যে বাকা কথার টিটকারি, এই যে পেটে এক মুখে এক, একে দয়া করতে পারা যায় না। সে-কথা শুনে তিনি বললেন, যেখানে তোমার নিজের একটু কোথাও বাজে সেইখানেই বুঝি তোমার যত দয়া, আর যেখানে ওদের জীবনের এপিঠ-ওপিঠ ফুড়ে সমাজের শেল বিধেছে সেখানে দয়া করবার কিছু নেই ? যারা পেটেণ্ড খাবে না, তারাই পিঠে ও সইবে ? হবে, হবে, আমারই মন ছোটো। আর-সকলেই ভালো কেবল আমি ছাড়া ! রাগ করে বললুম, তোমাকে তো ভিতরে থাকতে হয় না, সব কথা জান ন—এই বলে আমি তাকেও-মহলের একটা বিশেষ খবর দেবার চেষ্টা করতেই তিনি উঠে পড়লেন, বললেন, চন্দ্রনাথবাবু অনেকক্ষণ বাইরে বসে আছেন । আমি বসে বসে কাদতে লাগলুম। স্বামীর কাছে এমন ছোটো প্রমাণ হয়ে গেলে বঁচি কী করে ? অামার ভাগ্য যদি বঞ্চিত হত তা হলেও আমি যে কখনো ওদের মতে এমনতরো হতুম না সে তো প্রমাণ করবার জো নেই। দেখো, আমার এক-এক বার মনে হয় রূপের অভিমানের সুযোগ বিধাতা যদি মেয়েদের দেন, তবে অন্ত অনেক অভিমানের দুর্গতি থেকে তারা রক্ষণ পায়। হীরেজহরতের অভিমান করাও চলত, কিন্তু রাজার ঘরে তার কোনো অর্থই নেই। তাই আমার অভিমান ছিল সর্তীত্বের। সেখানে আমার স্বামীকেও হার মানতে হবে এটা আমার মনে ছিল । কিন্তু যখনই সংসারের কোনো খিটিমিটি নিয়ে তারুsসঙ্গে কথা কইতে গেছি, তখনই বারবার এমন ছোটো হয়ে গেছি যে, সে আমাকে মেরেছে । তাই তখন আমি তাকেই উলটে ছোটো করতে চেয়েছি। মনে মনে বলেছি, তোমাব এ-সব কথাকে ভালে বলে মানব না, এ কেবলমাত্র ভালোমাঙ্গুষি । এ তো নিজেকে দেওয়া নয়, এ অঙ্কের কাছে ঠকা । আমার স্বামীর বড়ো ইচ্ছা ছিল আমাকে বাইরে বের করবেন। একদিন আমি তাকে বললুম, বাইরেতে আমার দরকার কী ? তিনি বললেন, তোমাকে বাইরের দরকার থাকতে পারে। আমি বললুম, এতদিন যদি তার চলে গিয়ে থাকে জাজও চলবে, সে গলায় দড়ি দিয়ে মরবে না।