পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী هو هد তিনি বললেন, কেনই বা কাজ নেই ? আমি সঙ্গীপকে বলব—যদি কোনো রকমে সম্ভব হয় তাহলে কাল সে থেকে যাবে । দেখলুম সম্ভব হল । আমি সত্য কথা বলব। সেদিন আমার মনে হচ্ছিল ঈশ্বর কেন আমাকে আশ্চর্য সুন্দর করে গড়লেন না ? কারও মন হরণ করবার জন্তে যে, তা নয় । কিন্তু রূপ যে একটা গৌরব । আজ এই মহাদিনে দেশের পুরুষের দেশের নারীর মধ্যে দেখুক একবার জগদ্ধাত্রীকে । কিন্তু বাইরের রূপ না হলে তাদের চোখ ষে দেবীকে দেখতে পায় না। সন্দীপবাবু কি আমার মধ্যে দেশের সেই জাগ্রত শক্তিকে দেখতে পাবেন ? না, মনে করবেন, এ একজন সামান্ত মেয়েমানুষ, তার এই বন্ধুর ঘবের গৃহিণীমাত্র ? সেদিন সকালে মাথা ঘষে আমার স্বদীর্ঘ এলোচুল একটি লাল রেশমের ফিতে দিয়ে নিপুণ করে জড়িয়েছিলুম। দুপুরবেলায় খাবার নিমন্ত্রণ, তাই ভিজে চুল তখন খোপা করে বধিবার সময় ছিল না । গায়ে ছিল জরির পাড়ের একটি সাদা মাদ্রাজি শাড়ি, আর জরির একটুখানি পাড়-দেওয়া হাতকাটা জ্যাকেট। * আমি ঠিক করেছিলুম এ খুব সংযত সাজ, এর চেয়ে সাদাসিধা আর কিছু হতে পারে না । এমন সময় অামার মেজো জা এসে আমার মাথা থেকে পা পর্যস্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। তার পরে ঠোটদুটাে খুব টিপে একটু হাসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, দিদি, তুমি হাসলে যে ? তিনি বললেন, তোর সাজ দেখছি । আমি মনে মনে বিরক্ত হয়ে বললুম, এমনিই কি সাজ দেখলে ? তিনি আর-একবার একটুখানি বাকা হাসি হেসে বললেন, মন্ম হয় নি ছোটোরানী, বেশ হয়েছে। কেবল ভাবছি সেই তোমার বিলিতি দোকানের বুক-কাটা জামাটা পরলেই সাজটা পুরোপুরি হত । এই বলে তিনি কেবল তার মুখ-চোখ নয়, তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত দেহের ভঙ্গি হাসিতে ভরে ঘর থেকে চলে গেলেন। খুব রাগ হল এবং মনে হল সমস্ত ছেড়েছুড়ে আটপৌরে মোটাগোছের একটা শাড়ি পরি। কিন্তু সে-ইচ্ছা শেষ পর্যন্ত কেন যে পালন করতে পারলুম না ঠিক জানি নে। মনে মনে বললুম, আমি যদি ৰেশ ভদ্ররকম সাজ না করেই সন্দ্বীপবাবুর সামনে বেরোই তাহলে আমার স্বামী রাগ করবেন—মেয়েরা যে সমাজের শ্ৰী । ভেবেছিলুম, সঙ্গীপবাৰু একেবারে খেতে যখন বলবেন তখন তার সামনে বেরোৰ ।