পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y©b~ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিখিলেশের আত্মকথা একদিন আমার মনে বিশ্বাস ছিল ঈশ্বর আমাকে যা দেবেন আমি তা নিতে পারব । এ-পর্যন্ত তার পরীক্ষা হয় নি। এবার বুঝি সময় এল। মনকে যখন মনে মনে যাচাই করতুম অনেক দুঃখ কল্পনা করেছি। কখনো ভেবেছি দারিদ্র্য, কখনো জেলখানা, কখনো অসম্মান, কখনো মৃত্যু। এমন কি, কখনো বিমলের মৃত্যুর কথাও ভাবতে চেষ্টা করেছি। এ-সমস্তই নমস্কার করে মাথায় করে নেব এ-কথা যখন বলেছি বোধ হয় মিথ্যা বলি নি । কেবল একটা কথা কোনো দিন মনে কল্পনাও করতে পারি নি। আজ সেই কথাটা নিয়ে সমস্ত দিন বসে বসে ভাবছি, এও কি সইবে ? i মনের ভিতরে কোন জায়গায় একটা কাট। বিধে রয়েছে। কাজকর্ম করছি কিন্তু বেদনার অবসান নেই। বোধ হয় যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন সেই একটা ব্যথ পঞ্জির কাটতে থাকে। সকালে জেগে উঠেই দেখি দিনের আলোর লাবণ্য শুকিয়ে গেছে । কী ? এ কী ? কী হয়েছে ? এ কালে কিসের কালো ? কোথা দিয়ে আমার সমস্ত পূর্ণচাদের উপর ছায়া ফেলতে এল ? আমার মনের বোধশক্তি হঠাৎ এমন ভয়ানক বেড়ে উঠেছে যে, যে-দুঃখ আমার অতীতের,বুকের ভিতর স্বশ্বের ছদ্মবেশ পরে লুকিয়ে বসে ছিল তার সমস্ত মিথা। আজ আমার নাড়ি টেনে টেনে ছিড়ছে, আর যে-লজ। যে-দুঃখ ঘনিয়ে এল বলে, সে যতই প্রাণপণে ঘোমটা টানছে আমার হৃদয়ের সামনে ততই তার আবরু ঘুচে গেল। আমার সমস্ত হৃদয় দৃষ্টিতে ভরে গিয়েছে—যা দেখবার নয়, যা দেখতে চাই নে তাও বসে বসে দেখছি । আমি চিরদিন ঐশ্বর্যের ফকির মধ্যে এত বড়ো কাঙাল হয়ে বসেছিলুম সে-কথা এতকাল ভুলিয়ে রেখে আজ হঠাৎ দিনের পর দিনে, মুহুর্তের পর মুহূর্তে, কথার পর কথায়, দৃষ্টির পর দৃষ্টিতে, সেই আমার প্রতারিত জীবনের দুর্ভাগ্য এমন ভিল তিল করে প্রকাশ করবার দিন এল কেন ? যৌবনের এই নটা বছর মাত্র মায়াকে যা খাজনা দিয়েছি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যস্ত সত্য সেটাকে মুদে আসলে কড়ায় কড়ায় আদায় করতে থাকবে। ঋণশোধের সম্বল যার একেবারে ফুরোল সবচেয়ে বড়ো