পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԳ Տ রবীন্দ্র-রচনাবলী এবং দেশের কাজে দৌরাত্ম্যের দিকে তাড়না করে। তার প্রকৃতি স্কুল অথচ বুদ্ধি তীক্ষ্ণ বলেই সে আপনার প্রবৃত্তিকে বড়ো নাম দিয়ে সাজিয়ে তোলে। ভোগের তৃপ্তির মতোই বিদ্বেষের আশু চরিতার্থতা তার পক্ষে উগ্ররূপে দরকারি। টাকা সম্বন্ধে সন্দীপের একটা লোলুপতা আছে সে-কথা বিমল এর পূর্বে আমাকে অনেকবার বলেছে। আমি যে তা বুঝি নি তা নয় কিন্তু সন্দীপের সঙ্গে টাকা সম্বন্ধে কৃপণতা করতে পারতুম না। ও যে আমাকে ফাকি দিচ্ছে একথা মনে করতেও আমার লজ্জা হত। আমি যে ওকে টাকার সাহায্য করছি সেট পাছে কুশ্রী হয়ে দেখা দেয় এইজন্যে ও-সম্বন্ধে আমি কোনোরকম তকরার করতে চাইতুম না। আজ কিন্তু বিমলকে এ-কথা বোঝানো শক্ত হবে যে, দেশের সম্বন্ধে সন্দীপের মনের ভাবের অনেকখানিই সেই স্থল লোলুপতার রূপান্তর। সন্দ্বীপকে বিমল মনে মনে পূজা করছে, তাই আজ সন্দীপের সম্বন্ধে বিমলের কাছে কিছু বলতে আমার মন ছোটো হয়ে যায়, কী জানি হয়তো তার মধ্যে মনের ঈর্ষ এসে বেঁধে, হয়তো অত্যুক্তি এসে পড়ে । সন্দীপের যে-ছবি আমার মনে জাগছে তার রেখা হয়তো আমার বেদনার তীব্র তাপে বেকেচুরে গিয়েছে। তবু মনে রাখার চেয়ে লিখে ফেল। ভালো । আমার মাস্টারমশায় চন্দ্রনাথবাবুকে আজ আমার এই জীবনের প্রায় ত্রিশ বৎসর পর্যন্ত দেখলুম, তিনি না ভয় করেন নিন্দাকে, না ক্ষতিকে, না মৃত্যুকে । আমি যে-বাড়িতে জন্মেছি এখানে কোনো উপদেশ আমাকে রক্ষা করতে পারত না—কিন্তু ওই মাহফুটি তার শাস্তি, তার সত্য, তার পবিত্র মূর্তিখানি নিয়ে আমার জীবনের মাঝখানটিতে র্তার জীবনের প্রতিষ্ঠা করেছেন—তাই আমি কল্যাণকে এমন সত্য করে এমন প্রত্যক্ষ করে পেয়েছি । সেই চন্দ্রনাথবাবু সেদিন আমার কাছে এসে বললেন, সন্দীপকে কি এখানে জার দরকার আছে ? কোথাও অমঙ্গলের একটু হাওয়া দিলেই তার চিত্তে গিয়ে ঘা দেয়, তিনি কেমন করে বুঝতে পারেন। সহজে তিনি চঞ্চল হন না কিন্তু সেদিন সামনে তিনি মস্ত বিপদের একটা ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন । তিনি আমাকে কত ভালোবাসেন সে তো আমি জানি । চায়ের টেবিলে সন্দীপকে বললুম, তুমি রংপুরে যাবে না ? সেখান থেকে চিঠি পেয়েছি, তারা ভেবেছে আমিই তোমাকে জোর করে ধরে রেখেছি ।