পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳԾ) রবীন্দ্র-রচনাবলী লুকোচুরি করতে আমি চাই নে কেননা তাতে কাপুরুষতা আছে কিন্তু দরকার হলে যদি করতে না পারি তবে সেও কাপুরুষতা। তুমি যা চাও তা তুমি দেয়াল গেঁথে রাখতে চাও ; মুতরাং আমি যা চাই তা আমি সিধ কেটে নিতে চাই । তোমার লোভ আছে তাই তুমি দেওয়াল গাথ, আমার লোভ আছে তাই আমি সিধ কাটি । তুমি যদি কল কর, আমি কৌশল করব। এইগুলোই হচ্ছে প্রকৃতির বাস্তব কথা । এই কথাগুলোর উপরেই পৃথিবীর রাজ্য-সাম্রাজ্য, পৃথিবীর বড়ো বড়ো কাগুকারখানা চলছে । আর যে-সব অবতার স্বর্গ থেকে নেমে এসে সেইখানকার ভাষায় কথা কইতে থাকেন তাদের কথা বাস্তব নয়। সেইজন্তে এত চীৎকারে সে-সব কথা কেবলমাত্র দুর্বলদের ঘরের কোণে স্থান পায় ; যারা সবল হয়ে পৃথিবী শাসন করে তারা সে-সব কথা মানতে পারে না। কেননা মানতে গেলেই বলক্ষয় হয় ; তার কারণ কথাগুলো সত্যই নয়। যারা এ-কথা বুঝতে দ্বিধা করে না, মানতে লজ্জা করে ন৷ তারাই কৃতকার্য হল, আর যে-হতভাগা এক দিকে প্রকৃতি আর-এক দিকে অবতারের উৎপাতে বাস্তব অবাস্তব দু-নৌকায় পা দিয়ে দুলে মরছে তারা না পারে এগোতে, না পারে বঁাচতে । একদল মানুষ বাঁচবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে । স্বর্যান্তকালের আকাশের মতো মুম্যু তার একটা সৌন্দর্য আছে, তারা তাই দেখে মুগ্ধ । আমাদের নিধিলেশ সেই জাতের জীব,— ওকে নিজীব বললেই হয়। আজ চার বৎসর আগে ওর সঙ্গে আমার এই নিয়ে একদিন ঘোর তর্ক হয়ে গেছে। ও আমাকে বলে, জোর না হলে কিছু পাওয়া যায় না সে-কথা মালি, কিন্তু কাকে জোর বলো, আর কোন দিকে পেতে হবে তাই নিয়ে তর্ক । আমার জোর ত্যাগের দিকে জোর । আমি বললুম, অর্থাৎ লোকসানের নেশায় তুমি একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছ। নিখিলেশ বললে, ই, ডিমের ভিতরকার পাখি যেমন তার ডিমের খোলাটাকে লোকসান করবার জন্তে মরিয়া হয়ে ওঠে। খোলাটা খুব বাস্তব জিনিস বটে, তার বদলে সে পায় হাওয়া, পায় আলো—তোমাদের মতে সে বোধ হয় ঠকে । নিখিলেশ এইরকম রূপক দিয়ে কথা কয়, তার পরে আর তাকে বোঝানো শক্ত যে তৎসত্ত্বেও সেগুলো কেবলমাত্র কথা, সে সত্য নয়। তা বেশ, ও এইরকম রূপক নিয়েই মুখে থাকে তো থাক—আমরা পৃথিবীর মাংসাশী জীব, আমাদের দাত আছে, নখ আছে, আমরা দৌড়তে পারি, ধরতে পারি, ছিড়তে পারি,—আমরা সকালবেলায় ঘাস খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারই রোমন্থনে দিন কাটাতে পারি নে অতএব এ-পৃথিবীতে