পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b"と。 রবীন্দ্র-রচনাবলী আনন্দ, এই তো আনন্দ, এই তো বাস্তবের তাণ্ডব নৃত্য—তার পরে মরণ-বাচন, ভালো-মন, স্থখ-দুঃখ তুচ্ছ তুচ্ছ তুচ্ছ । আমার মক্ষীরানী স্বপ্নের ঘোরেই চলছে—সে জানে না কোন পথে চলছে। সময় আসবার আগে তাকে হঠাৎ জানিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়া নিরাপদ নয়। আমি যে কিছুই লক্ষ্য করি নে এইটে জানানোই ভালো । সেদিন আমি যখন খাচ্ছিলুম মক্ষীরানী আমার মুখের দিকে একরকম করে তাকিয়ে ছিল, একেবারে ভুলে গিয়েছিল এই চেয়ে-থাকার অর্থ টা কী । আমি হঠাৎ একসময়ে তার চোখের দিকে চোখ তুলতেই তার মুখ লাল হয়ে উঠল, চোখ অন্ত দিকে ফিরিয়ে নিলে। আমি বললুম, আপনি আমার খাওয়া দেখে একেবারে অবাক হয়ে গেছেন। অনেক জিনিস লুকিয়ে রাখতে পারি কিন্তু আমার ওই লোভট। পদে পদে ধরা পড়ে। তা দেখুন, আমি যখন নিজের হয়ে লজ্জা করি নে তখন আপনি আমার হয়ে লজ্জা করবেন না। সে ঘাড় বেঁকিয়ে আরও লাল হয়ে উঠে বলতে লাগল, না না, আপনি— আমি বললুম, আমি জানি লোভী মানুষকে মেয়েরা ভালোবাসে—ওই লোভের উপর দিয়েই তো মেয়েরা তাদের জয় করে । আমি লোভী তাই বরাবর মেয়েদের কাছ থেকে অfদর পেয়ে-পেয়ে আজ আমার এমন দশা হয়েছে যে, আর লজ্জার লেশমাত্র নেই। অতএব আপনি একদৃষ্টে অবাক হয়ে আমার খাওয়া দেখুন না, আমি কিছু কেয়ার করি নে। এই ডাটাগুলির প্রত্যেকটিকে চিবিয়ে একেবারে নিঃসত্ত্ব করে ফেলে দেব তবে ছাড়ব—এই আমার স্বভাব । আমি কিছুদিন আগে আজকালকার দিনের একখানি ইংরেজি বই পড়ছিলুম, তাতে স্ত্রীপুরুষের মিলননীতি সম্বন্ধে খুব স্পষ্ট-স্পষ্ট বাস্তব কথা আছে। সেইটে আমি ওদের বৈঠকখানায় ফেলে গিয়েছিলুম। একদিন দুপুরবেলায় আমি কী জন্তে সেই ঘরে ঢুকেই দেখি মক্ষীরানী সেই বইট। হাতে করে নিয়ে পড়ছে—পায়ের শব্দ পেয়েই তাড়াতাড়ি সেটার উপর আর-একটা বই চাপ দিয়ে উঠে পড়ল । যে-বইট চাপা দিল সেটা লংফেলোর কবিতা । আমি বললুম, দেখুন আপনার কবিতার বই পড়তে লজ্জা পান কেন আমি কিছুই বুঝতে পারি নে। লজ্জা পাবার কথা পুরুষের, কেননা, আমরা কেউ ব৷ অ্যাটর্নি, কেউ বা এঞ্জিনিয়ার ; আমাদের যদি কবিতা পড়তেই হয় তাহলে অর্ধেকরাত্রে দরজা বন্ধ করে পড়া উচিত । কবিতার সঙ্গেই তো আপনাদের আগাগোড়া মিল । যে বিধাতা আপনাদের স্বষ্টি করেছেন তিনি যে গীতিকবি,—জয়দেব তারই পায়ের কাছে বসে “ললিতলবঙ্গলতা”য় হাত পাকিয়েছেন ।