পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sసి\b রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার স্ত্রী, অতএব ও আমারই! ও যদি বলতে চায়, না, আমি আমিই— তখনই আমি বলব, সে কেমন করে হবে, তুমি যে আমার স্ত্রী ! স্ত্রী । ওটা কি একটা যুক্তি, ওটা কি একট। সত্য ? ওই কথাটার মধ্যে একটা আস্ত মানুষকে আগাগোড়া পুরে ফেলে কি তালা বন্ধ করে রাখা যায় ? স্ত্রী ! এই কথাটিকে ষে আমার জীবনের ষা-কিছু মধুর, যা-কিছু পবিত্র সব দিয়ে বুকের মধ্যে মানুষ করেছি, একদিনও ওকে ধুলোর উপর নামাই নি। ওই নামে কত পূজার ধূপ, কত সাহানার বাশি, কত বসন্তের বকুল, কত শরতের শেফালি ! ও যদি কাগজের খেলার নৌকার মতো আজ হঠাৎ নর্দমার ঘোলা জলে ডুবে যায় তাহলে সেই সঙ্গে আমার— ওই দেখো, আবার গাম্ভীর্য ! কাকে বলছ নর্দমা, কাকে বলছ ঘোলা জল ? ও-সব হল রাগের কথা। তুমি রাগ করবে বলেই জগতে এক জিনিস আর হবে না। বিমল যদি তোমার না হয় তে। সে তোমার নয়ই, যতই চাপাচাপি রাগারাগি করবে ততই ওই কথাটাই আরও বড়ো করে প্রমাণ হবে। বুক ফেটে যায় যে—তা যাক । তাতে বিশ্ব দেউলে হবে না, এমন কি, তুমিও দেউলে হবে না। জীবনে মানুষ যা-কিছু হারায় তার সকলের চেয়েও মানুষ অনেক বেশি বড়ো—সমস্ত কান্নার সমুদ্র পেরিয়েও তার পার আছে—এইজন্তেই সে কাদে, নইলে র্কাদতও না । কিন্তু সমাজের দিক থেকে—সে-সব কথা সমাজ ভাবুক গে, যা করতে হয় করুক । আমি কাদছি আমার আপন কাল্লা, সমাজের কাল্লা নয়। বিমল যদি বলে সে আমার স্ত্রী নয়, তাহলে আমার সামাজিক স্ত্রী যেখানে থাকে থাক, আমি বিদায় হলুম। দুঃখ তো আছেই। কিন্তু একটা দুঃখ বড়ো মিথ্যে হবে, সেটা থেকে নিজেকে যে-করে পারি বাচাবই। কাপুরুষের মতো এ-কথা মনে করতে পারব না যে, অনাদরে আমার জীবনের দাম কমে গেল । আমার জীবনের মূল্য আছে—সেই মূল্য দিয়ে আমি কেবল আমার ঘরের অন্তঃপুরটুকু কিনে রাখবার জন্তে আসি নি। আমার যা বড়ো ব্যবসা সে কিছুতেই দেউলে হবে না, আজ এই কথাটা খুব সত্য করে ভাববার দিন এসেছে । আজ যেমন নিজেকে তেমনি বিমলকেও সম্পূর্ণ বাইরে থেকে দেখতে হবে। এতদিন আমি আমারই মনের কতকগুলি দামি আইডিয়াল দিয়ে বিমলকে সাজিয়ে ছিলুম। আমার সেই মানসী মূর্তির সঙ্গে সংসারে বিমলের সব জায়গায় যে মিল ছিল তা নয়, কিন্তু তবুও আমি তাকে পূজা করে এসেছি আমার মানসীর মধ্যে। সেটা আমার গুণ নয়, সেইটেই আমার মহদোষ । আমি লোভী—জামি আমার