পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে S&& নৈবেদ্য । আমার বিশ্বাস মৃত্যুর পরে আর সবই ভুলব, সব ভুল, সব কান্না-কিন্তু এই চুম্বনের স্মৃতির স্পন্দন কোনো একটা জায়গায় থেকে যাবে—কেননা, জন্মের পর জন্মে এই চুম্বনের মালা ৰে গাথা হয়ে যাচ্ছে সেই প্রেত্নসীর গলায় পরানো হবে বলে । এমন সময়ে আমার ঘরের মধ্যে আমার মেজো ভাঙ্গ এসে ঢুকলেন। তখন আমাদের পাহারার ঘড়িতে চং ঢং করে দুটো বাজল । ঠাকুরপো, তুমি করছ কী ? লক্ষ্মী ভাই, শুতে যাও—তুমি নিজেকে এমন করে দুঃখ দিয়ে না। তোমার চেহারা যা হয়ে গেছে সে আমি চোখে দেখতে পারি নে। এই বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়তে লাগল । আমি একটি কথাও না বলে তাকে প্রণাম করে তার পায়ের ধুলো নিয়ে শুতে গেলুম। বিমলার আত্মকথ। গোড়ায় কিছুই সন্দেহ করি নি, ভয় করি নি ; আমি জানভূম দেশের কাছে আত্মসমর্পণ করছি। পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণে কী প্রচণ্ড উল্লাস! নিজের সর্বনাশ করাই নিজের সব-চেয়ে আনন্দ এই কথা সেদিন প্রথম আবিষ্কার করেছিলুম। জানি নে, হয়তো এমনি করেই একটা অস্পষ্ট আবেগের ভিতর দিয়ে এই নেশাট একদিন আপনিই কেটে যেত। কিন্তু সন্দীপবাবু ষে থাকতে পারলেন না, তিনি যে নিজেকে স্পষ্ট করে তুললেন। তার কথার সুর যেন স্পর্শ হয়ে আমাকে ছুয়ে যায়, চোখের চাহনি যেন ভিক্ষা হয়ে আমার পায়ে ধরে । অথচ তার মধ্যে এমন একটা ভয়ংকর ইচ্ছার জোর, যেন সে নিষ্ঠুর ডাকাতের মতো আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে ছিড়ে নিয়ে যেতে চায়। আমি সত্য কথা বলব, এই ছৰ্দান্ত ইচ্ছার প্রলয়মূর্তি দিনরাত আমার মনকে টেনেছে। মনে হতে লাগল বড়ো মনোহর নিজেকে একেবারে ছারখার করে দেওয়া । তাতে কত লজ্জা, কত ভয়, কিন্তু বড়ো তীব্র মধুর সে । আর কৌতুহলের অন্ত নেই,—ষে-মানুষকে ভালো করে জানি নে, ষে-মানুষকে নিশ্চয় করে পাব না, ষে-মাচুবের ক্ষমতা প্রবল, ষে-মানুষের যৌবন সহস্রশিখায় জলছে, তার ক্ষুদ্ধ কামনার রহস্ত—সে কী প্রচও, কি বিপুল। এ তো কখনো কল্পনাও করতে পারি নি। যে-সমূদ্র বহুদূরে ছিল, পড়া-বইয়ের পাতায় বার নাম গুনেছি