পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ra রবীন্দ্র-রচনাবলী مbہ S ওই যে মেজোরানী নিশ্চিন্তমনে বারান্দায় বসে সুপুরি কাটছেন, ওই সহজ আসলে বসে সহজ কাজের ধারা আমার কাছে আজ আমন দুর্গম হয়ে উঠল । রোজ রোজ নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, এর শেষ কোনখানে ? আমি কি মরে যাব, সন্দীপ কি চলে যাবে, এ-সমস্তই কি রোগীর প্রলাপের মতো স্বস্থ হয়ে উঠে একেবারে ভুলে স্বাব—না ঘাড়মোড় ভেঙে এমন সর্বনাশের তলায় তলিয়ে যাব যেখান থেকে ইহজীবনে আমার আর উদ্ধার নেই ? জীবনের সৌভাগ্যকে সরলভাবে গ্রহণ করতে পারলুম ন-এমন করে ছারখার করে দিলুম কী করে ? আমার এই শোবার ঘর, যে-ঘরে আজ ন-বংসর আগে নতুন বউ হয়ে পা দিয়েছিলুম, সেই ঘরের সমস্ত দেয়াল ছাদ মেজে আমার মুখের দিকে চেয়ে আজ অবাক হয়ে আছে । এম. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমার স্বামী কলকাতা থেকে ভারতসাগরের কোন এক দ্বীপের অনেক দামী এই পরগাছাটি কিনে এনেছিলেন। এই কটি মাত্র পাতা, কিন্তু তাতে লম্বা যে একটি ফুলের গুচ্ছ ফুটেছিল সে যেন সৌন্দর্যের কোন পেয়াল। একেবারে উপুড় করে ঢেলে দেওয়া, ইন্দ্ৰধম যেন ওই কটি পাতার কোলে ফুল হয়ে জন্ম নিয়ে দোল খাচ্ছে । সেই ফুটন্ত পরগাছাটিকে আমরা দুজনে মিলে আমাদের শোবার ঘরের এই জানলার কাছে টাঙিয়ে রেখেছি ; সেই একবার ফুল হয়েছিল, আর হয় নি, আশা আছে আবার আর-একদিন ফুল ফুটবে। আশ্চর্য এই যে, অভ্যাসমতো আজও এই গাছে আমি রোজ জল দিচ্ছি, আশ্চর্য এই যে, সেই নারকেল-দড়ি দিয়ে পাকে পাকে আঁট করে বাধা এই পাতা-কয়টির বাধন আলগা হল না—তার পাতাগুলি আজও সবুজ আছে । আজ চার বছর হল আমার স্বামীর একটি ছবি হাতির দাতের ফ্রেমে বাপিয়ে ওই কুলুঙ্গির মধ্যে রেখে দিয়েছিলুম। ওর দিকে দৈবাৎ যখন আমার চোখ পড়ে আর চোখ তুলতে পারি নে। আজ ছ-দিন আগেও রোজ সকালে স্নানের পর ফুল তুলে ওই ছবির সামনে রেখে প্ৰণাম করেছি। কতদিন এই নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আমার তর্ক হয়ে গেছে । একদিন তিনি বললেন, তুমি যে আমাকে আমার চেয়ে ৰড়ো করে তুলে পুজো কর, এতে আমার বড়ো লজ্জা বোধ হয় । আমি জিজ্ঞাসা করলুম, কেন তোমার লজ্জা ? স্বামী বললেন, শুধু লঙ্গ নয় ঈর্ষ । আমি বললুম, শোনো একবার কথা । তোমার আবার ঈর্ষা কাকে ? স্বামী বললেন, ওই মিথ্যে-আমিটাকে । এর থেকে বুঝতে পারি এই সামান্ত