পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৩ রবীন্দ্র-রচনাবলী করি নি, যা কিনে আনি নি, যা কোনো চিকিৎসকের কাছ থেকে পাওয়া নয়, যা আমাদের স্বপ্নলব্ধ । সেইজন্তে মনে হল আমাদের সব দুঃখ সব তাপ আপনি মন্ত্রে সেরে যাবে। সম্ভব অসম্ভবের কোনো সীমা কোথাও রইল না। কেবলই মনে হতে লাগল, এই হল বলে, . হল বলে । আমাদের সেদিন মনে হয়েছিল ইতিহাসের কোনো বাহন নেই, পুষ্পকরথের মতো সে আপনি চলে আসে—অন্তত তার মাতলিকে কোনো মাইনে দিতে হয় না ; তার খোরাকির জন্য কোনো ভাবন নেই, কেবল ক্ষণে ক্ষণে তার মদের পেয়ালা ভরতি করে দিতে হয়—আর তার পরেই হঠাৎ একেবারে সশরীরে স্বর্গপ্রাপ্তি । আমার স্বামী যে অবিচলিত ছিলেন তা নয়। কিন্তু সমস্ত উত্তেজনার মধ্যে তাকে যেন একটা বিষাদ এসে আঘাত করত। যেটা সামনে দেখা যাচ্ছে তার উপর দিয়েও তিনি যেন আর-একটা-কিছুকে দেখতে পেতেন। মনে আছে সন্দীপের সঙ্গে তর্কে তিনি একদিন বলেছিলেন, সেী ভাগ্য হঠাৎ এসে আমাদের দরজার কাছে হাক দিয়ে যায়, কেবল দেখাবার জন্যে যে তাকে গ্রহণ করবার শক্তি আমাদের নেই ; তাকে ঘরের মধ্যে নিমন্ত্রণ করে বসাবার কোনো আয়োজন আমরা করি নি । সন্দীপ বললেন, দেখো নিখিল, তুমি দেবতাকে মান না, সেই জন্তেই এমন নাস্তিকের মতো কথা ক ও । আমরা প্রত্যক্ষ দেখছি দেবী বর দিতে এসেছেন আর তুমি অবিশ্বাস করছ ? আমার স্বামী বললেন, আমি দেবতাকে মানি সেইজন্যেই অস্তরের মধ্যে নিশ্চিত জানি তার পূজা আমরা জোটাতে পারলুম না। বর দেবার শক্তি দেবতার আছে কিন্তু বর নেবার শক্তি আমাদের থাকা চাই । আমার স্বামীর এইরকমের কথায় আমার ভারি রাগ হত। আমি তাকে বললুম, তুমি মনে কর দেশের এই উদ্দীপনা, এ কেবলমাত্র একটা নেশা । কিন্তু নেশায় কি শক্তি দেয় না ? তিনি বললেন, শক্তি দেয় কিন্তু অস্ত্র দেয় না। আমি বললুম, শক্তি দেবতা দেন, সেইটেই দুর্লভ, আর অস্ত্র তো সামান্ত কামারেও দিতে পারে । স্বামী হেসে বললেন, কামার তো অমনি দেয় না, তাকে দাম দিতে হয়। সন্দ্বীপ বুক ফুলিয়ে বললেন, দাম দেব গো দেব। স্বামী বললেন, যখন দেবে তখন আমি উৎসবের রোশনচোঁকি বায়না দেব।