পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ২২৭ সন্দীপ বললেন, তোমার বায়নার আশায় আমরা বসে নেই। আমাদের নিকড়িয়া উৎসব কড়ি দিয়ে কিনতে হবে না । বলে তিনি তার ভাঙা মোটা গলায় গান ধরলেন, আমার নিকড়িয়া-রসের রসিক কানন ঘুরে ঘুরে নিকড়িয়া বাশের রাশি বাজার মোহন স্বরে। আমার দিকে চেয়ে হেসে বললেন, মক্ষীরানী, গান যখন প্রাণে আসে তখন গলা না থাকলেও যে বাধে না এইটে প্রমাণ করে দেবার জন্তেই গাইলুম। গলার জোরে গাইলে গানের জোর হালকা হয়ে যায়। আমাদের দেশে হঠাৎ ভরপুর গান এসে পড়েছে, এখন নিখিল বসে বসে গোড়া থেকে সারগম সাধতে থাকুক, ইতিমধ্যে আমরা ভাঙা গলায় মাতিয়ে তুলব। আমার ঘর বলে, তুই কোথায় যাবি, বাইরে গিয়ে সব খোল্লাবি,— আমার প্রাণ বলে, তোর যা আছে সব যাক না উড়ে পুড়ে । আচ্ছা, না হয় আমাদের সর্বনাশই হবে, তার বেশি তো নয়, রাজি আছি, তাতেই রাজি আছি । ওগো, যার যদি তো যাক না চুকে, সব হারাব হাসিমুখে, আমি এই চলেছি মরণসুধা নিতে পরান পুরে । আসল কথা হচ্ছে নিখিল, আমাদের মন ভুলেছে, আমরা মুসাধ্য-সাধনের গণ্ডির মধ্যে টিকতে পারব না, আমরা অসাধ্য-সাধনের পথে বেরিয়ে পড়ব । ওগো, আপন যার কাছে টানে এ রস তারা কেই বা জানে, আমার বাক পথের বঁাকা সে যে ডাক দিয়েছে দূরে । এৰার বঁাকার টানে সোজার বোঝা পড়ক ভেঙে চুরে। মনে হল আমার স্বামীর কিছু বলবার আছে, কিন্তু তিনি বললেন না, আস্তে আস্তে চলে গেলেন । সমস্ত দেশের উপর এই যে একটা প্রবল আবেগ হঠাৎ ভেঙে পড়ল, ঠিক এই