পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sలం রবীন্দ্র-রচনাবলী শামাদানে দিশি বাতি জালিয়ে লেখাপড়া করেন—কিন্তু তার এই অত্যন্ত সাদা ফিকে রঙের স্বদেশীতে আমরা মনের মধ্যে কোনো রস পাই নি । বরঞ্চ তখন তার বসবার ঘরে আসবাবের দৈন্তে আমি বরাবর লজ্জা বোধ করে এসেছি, বিশেষত বাড়িতে যখন ম্যাজিস্টেট কিংবা আর কোনো সাহেব-স্থবোর সমাগম হত। আমার স্বামী হেসে বলতেন, এই সামান্ত ব্যাপার নিয়ে তুমি অত বিচলিত হচ্ছ কেন । আমি বলতুম, ওরা যে আমাদের অসভ্য অজযুগ মনে করে যাবে। তিনি বলতেন, তা যখন মনে করবে তখন আমিও এই কথা মনে করব ওদের সভ্যতা চামড়ার উপরকার সাদা পালিশ পর্যন্ত, বিশ্বমামুষের ভিতরকার লাল রক্তধারা পর্যন্ত পৌছয় নি। ওঁর ডেস্কে একটি সামান্ত পিতলের ঘটিকে উনি ফুলদানি করে ব্যবহার করতেন । কতদিন কোনো সাহেব আসবার খবর পেলে আমি লুকিয়ে সেটিকে সরিয়ে বিলিতি রঙিন কাচের ফুলদানিতে ফুল সাজিয়ে রেখেছি । আমার স্বামী বলতেন, দেখে বিমল, ফুলগুলি যেমন আত্মবিশ্বত আমার এই পিতলের ঘাটটিও তেমনি । কিন্তু তোমার ওই বিলিতি ফুলদানি অত্যন্ত বেশি করে জানায় যে ও ফুলদানি, ওতে গাছের ফুল না রেখে পশমের ফুল রাখা উচিত । তখন এ-সম্বন্ধে তার একমাত্র উৎসাহদাতা ছিলেন মেজোরানী । তিনি একেবারে ইপিয়ে এসে বলতেন, ঠাকুরপো, শুনেছি আজকাল দিশি সাবান উঠেছে নাকি— আমাদের তে ভাই সাবান মাখার দিন উঠেই গেছে তবে ওতে যদি চবি না থাকে তাহলে মাখতে পারি। তোমাদের বাড়িতে এসে অবধি ওই এক অভ্যেস হয়ে গেছে । অনেকদিন তো ছেড়েই দিয়েছি তবু সাবান না মেখে আজও মনে হয় যেন স্নানট। ঠিকমতো হল না । এতেই আমার স্বামী ভারি খুশি । বাক্স বাক্স দিশি সাবান আসতে লাগল। সে কি সাবান, না সাজিমাটির ডেলা । আমি বুঝি জানি নে ? স্বামীর আমলে মেজোরানী যে বিলিতি সাবান মাখতেন আজও সমানে তাই চলেছে, একদিনও কামাই নেই ; ওই দিশি সাবান দিয়ে তার কাপড়-কাচা চলতে লাগল। আর-একদিন এসে বললেন, ভাই ঠাকুরপো, দিশি কলম নাকি উঠেছে, সে তো আমার চাই । মাথা খাও আমাকে এক বাণ্ডিল— ঠাকুরপো মহা উৎসাহিত । কলমের নাম ধরে যত রকমের দা গুনের কাঠি তখন বেরিয়েছিল সব মেজোরানীর ঘরে বোঝাই হতে লাগল। ওতে ওঁর কোনো অসুবিধা ছিল না, কেননা লেখাপড়ার সম্পর্ক ওঁর ছিল না বললেই হয় । ধোবার