পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిలిపి রবীন্দ্র-রচনাবলী হাটে হাটে তুমুল গণ্ডগোল বেধেছে। আমাদের সকলেরই খুব একটা জেদ চড়ে গেছে । আমাকে সন্দীপ এসে বললেন, এভবড়ো হাটবাজার আমাদের হাতে আছে এটাকে আগাগোড়া স্বদেশী করে তুলতে হবে, এই এলাকা থেকে বিলিতি অলক্ষ্মীকে কুলোর হাওয়া দিয়ে বিদায় করা চাই । আমি কোমর বেঁধে বললুম, চাই বই কি । সন্দীপ বললেন, এ নিয়ে নিখিলের সঙ্গে আমার অনেক কথা-কাটাকাটি হয়ে গেছে, কিছুতে পেরে উঠলুম না। ও বলে, বক্তৃতা পর্যন্ত চলবে কিন্তু জবরদস্তি চলবে না । আমি একটু অহংকার করেই বললুম, আচ্ছা সে আমি দেখছি। 曾 আমি জানি আমার উপর আমার স্বামীর ভালোবাস কত গভীর। সেদিন আমার বুদ্ধি যদি স্থির থাকত তাহলে আমার পোড়া মুখ নিয়ে এমন দিনে সেই ভালোবাসার উপর দাবি করতে যেতে আমার লজ্জায় মাথা কাটা যেত। কিন্তু সন্দীপকে যে দেখাতে হবে আমার শক্তি কত । তার কাছে আমি যে শক্তিরূপিণী ! তিনি র্তার আশ্চর্য ব্যাখ্যার দ্বারা বার বার আমাকে এই কথাই বুঝিয়েছেন যে, পরমাশক্তি একএকজন বিশেষ মানুষের কাছে এক-একজন বিশেষ মানুষেরই রূপে দেখা দেন – তিনি বলেন, আমরা বৈষ্ণবতত্ত্বের হলাদিনীশক্তিকে প্রত্যক্ষ দেখবার জন্তেই এত ব্যাকুল হয়ে বেড়াচ্ছি, যখন কোথাও দেখতে পাই তখনই স্পষ্ট বুঝতে পারি আমার অস্তরের মধ্যে যে ত্রিভঙ্গ বাশি বাজাচ্ছেন তার বাশির অর্থ ট। কী । বলতে বলতে এক-একদিন গান ধরতেন, যখন দেখা দাও নি রাধী তখন বেজেছিল বাঁশি । এখন চোখে চোগে চেয়ে স্বর যে আমার গেল ভাসি । তখন নানা তানের ছলে ডাক ফিরেছে জলে স্থলে, এখন আমার সকল কাদা রাখার রূপে উঠল হাসি । এই সব কেবলই শুনতে শুনতে আমি ভুলে গিয়েছিলুম যে, আমি বিমলা। আমি শক্তিতত্ত্ব, আমি রসতত্ত্ব, আমার কোনো বন্ধন নেই, আমার মধ্যে সমস্তই সম্ভব, আমি যা-কিছুকে স্পর্শ করছি তাকেই নূতন করে স্বষ্টি করছি –নুতন করে স্বষ্টি করেছি আমার এই জগৎকে, আমার হৃদয়ের পরশমণি ছোয়াবার আগে শরতের আকাশে এত সোনা ছিল না, আর মুহূতে মুহূতে আমি নূতন করছি ওই বীরকে, ওই সাধককে, ওই আমার ভক্তকে—ওই জ্ঞানে উজ্জল, তেজে উদ্দীপ্ত,